Get PDF go here PDF Books Contact Us

একানড়ে - শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য Ekanore by Sakyajit Bhattacharya

একানড়ে pdf book download - শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য Ekanore by Sakyajit Bhattacharya
boibd
 শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর লেখা "শেষ মৃত পাখী" বইটি গতবছর বাংলা সাহিত্য জগতে বেশ আলোড়ন তৈরি করায় আমিও একটি কিনে ফেলেছিলাম। কিন্তু পড়ার সুযোগ এখনও হয়ে ওঠেনি বইটি হাতে না পাওয়ার কারণে। ভুতের গল্প প্রেমীরা শিগগিরি পড়ে ফেলতে পারেন বইটি। ঝমঝমে বৃষ্টির আলোহীন রাতে পড়ার উপযুক্ত বই।


বই – একানড়ে
লেখক – শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
প্রকাশক – সপ্তর্ষি প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ – ১লা ফেব্রুয়ারী, ২০২২
পৃষ্ঠা – ১৩৩
মুদ্রিত মূল্য – ২০০/-​

"একানড়ে, কানেকড়ে তেঁতুল পাড়ে, ছড়ে ছড়ে
এক হাতে তার নুনের ভাঁড়, আরেক হাতে ছুরি
কান কেটে, নুন ঘসে বেড়ায় বাড়ি বাড়ি৷ " - সলীল চৌধুরী
বাংলা সাহিত্যে ভূত–প্রেত–শাকচুন্নি–পেত্নীদের আকর্ষণ চিরন্তন। শিশু থেকে বয়স্ক প্রত্যেকের কাছেই ভৌতিক জগতের হাতছানি সমানভাবেই জনপ্রিয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোককথায় তাই এরা বারংবার ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও নামে ঘুরে ফিরে আসতে থাকে। বঙ্গ জীবনে যদিও বাংলার লৌকিক অপদেবতা নিয়ে গল্প লেখায় ভাটা পড়েছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। মাঝে মাঝে কালজয়ী সেই সব ভূতদের প্রসঙ্গে তাই হয়ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শোনা যেত– “সেই সব ভূতগুলো গেল কোথায়?” ভূত প্রসঙ্গে বিখ্যাত ব্যাঙ্গকৌতুক রচয়িতা ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, "যেমন জল জমাইয়া বরফ হয়। অন্ধকার জমিয়া তেমনি ভূত হয়।” বাক্যের ‘অন্ধকার’ শব্দের ব্যবহার আক্ষরিক অর্থে করেননি তিনি। এই শব্দের ভিতর দিয়েই মানব মনের অন্তঃস্থলে জমে থাকা জটিল গভীর নিবিড় অন্ধকারময় মানসিক স্থিতির ইঙ্গিত করেছিলেন। ‘ভূত’ কি শুধুই মৃত অশরীরী অর্থেই ব্যবহৃত একটি শব্দ? মানুষের মনে জমে থাকা অন্ধকার চিন্তা ভাবনাও তো অপদেবতাদেরই লক্ষণ বহন করে।

যদিও ছোটবেলার রূপকথার গল্পে বা বড়বেলার অশরীরীদের গায়ে কাঁটা দেওয়া কাহিনীতে যে সমস্ত ভূত প্রেতদের উল্লেখ পাওয়া যায় তারা লৌকিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে থাকে। এই রকম এক লৌকিক ভূত হল “একানড়ে”। ‘একটি নড়ি’ অর্থাৎ কিনা একখানা লাঠি হাতে ঘুরে বেড়ানো ভূত একানড়ের একটা মাত্র পা। একটামাত্র পা সম্বল করেই নড়বড়ে ভাবে সে রাত বিরেতে ঘুরে বেড়াত। লৌকিক কাহিনী অনুযায়ী অবশিষ্ট পা খানি ঝুলিয়ে সে তালগাছের মগডালে বসে থাকে। দুষ্টু ছেলেমেয়ে যারা বড়দের কথা শোনে না, ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া ঘুম এই সব কাজ করেনা - তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তালগাছে আটকে রাখে। বেশি দুষ্টুমি করলে তুলে আছাড় মারে। প্রচলিত গ্রাম্য শিশুতোষ ছড়া আছে যা শিশুদের শুনিয়ে রাতে ঘুম পাড়ানো হত –

“যে ছেলেটা কাঁদে, তাকে ঝুলির ভেতর ভরে
গাছের উপর উঠে তুলে আছাড় মারে।”

শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর লেখা “একানড়ে” এমনি এক তালগাছ ও তাকে ঘিরে লোকমুখে প্রচলিত গল্পকথার সাথে জড়িয়ে যাওয়া কিছু মানুষের জীবন নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। নয় বছরের শিশু টুনু। বাবা মায়ের ফাটল ধরা দাম্পত্যের বলি। আসন্ন বিচ্ছেদের জটিলতায় বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তার ঠাই হয় বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে তার মামাবাড়িতে। যে বাড়ির সামনে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সুবিশাল তালগাছ। গ্রামের মানুষ সেই তালগাছকে এড়িয়ে চলে, কারণ ওখানে নাকি একানড়ে বাস করে। যে রাতের বেলায় ছোট ছোট ছেলেদের ধরে নিয়ে যায়। দিদার কাছে টুনু গল্প শোনে –

‘ওই তালগাছ, ওটার মাথায় থাকে।’ চোখ বড় বড় করে ফিসফিসিয়ে বলছিল দিদা, ‘হাতে একটা বস্তা। বস্তায় করে নুন জমিয়ে রাখে, আর সেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের কান রেখে দেয়। যে বাড়ির জানলা খোলা পায়, তালগাছের মাথা থেকে এক লাফে সেই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে সট করে। তারপর যেসব ছোট ছেলেরা শুয়ে থাকে, ছুরি দিয়ে এক কোপে তাদের কান কেটে নেয়। একানড়ের বড় বড় দাঁত, ভাঁটার মতো চোখ গোল গোল। রাতে শুনবি, সি সি আওয়াজ করে।’
টুনু ভয়ে দিদার কোলের ভিতর সেঁধিয়ে যায়। মামাবাড়িতে আছে দাদু, দিদা, বিশ্বমামা, মামী ও তাঁদের ছেলে গুবলু, আছে গ্রামের একদল কিশোর ও যুবক যাদের সাথে টুনুর বন্ধুত্ব হয়। কিংবা আদৌ হয়না। খেলার সাথীর খোঁজে হয়ত তাদের সঙ্গী হয় নিঃসঙ্গ মা-বাবা বিচ্ছিন্ন অসহায় টুনু। আর আছে টুনুর বারো বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া ছোটমামা। যার অপেক্ষায় টুনুর দিদা এখনও জানলার ধারে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখেন। জিজ্ঞাসা করলে বলেন “একানড়ে নাকি ধরে নিয়ে গেছে।”

এইসমস্ত ঘিরেই বয়ে চলে টুনুর শৈশব। স্কুল যাওয়ার অনিশ্চয়তা, মাকে দেখতে না পারার বিপন্নতা, বাবাকে মনে পড়ার মনোবেদনা তার শিশু মনের জগতে ধুসরতা মাখানো কল্প জগতের জাল বিস্তার করতে থাকে।

শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য লিখিত বই এর আগে পড়ার সুযোগ হয়নি। বইটি হাতে পেয়ে আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। প্রথমেই যে বিষয়টি আকৃষ্ট করল তা হল বইয়ের গদ্যশৈলী। বহু বছর পর এক অসাধারণ ভাষার ব্যবহারে গদ্য রচনা পড়ার সুযোগ হল যা ইদানিংকালের বাংলা সাহিত্যে প্রায় বিরল। লেখকের অপূর্ব কাহিনী বিন্যাস, রূপকের সাহায্যে গল্পের অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করা, শব্দচয়ন, বাক্য বিন্যাস এবং সর্বোপরি কাহিনীতে না বলা কথার মাধ্যমে গায়ে কাঁটা দেওয়া হিমশীতল পরিবেশ–পরিস্থিতির মাধ্যমে পাঠক মনে ভয়ের সঞ্চার করার অসাধারণ দক্ষতা মুগ্ধ করে দেয়। গল্পটিকে নিছক ভূতের গল্প বলা যায়না। একটি অসহায় নিঃসঙ্গ শিশুর একাকিত্বের মনস্তত্ব ও গ্রামীণ অন্ধবিশ্বাস মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। পাঠক ভয় পাওয়ার সাথে সাথে টুনুর মতই অসহায়তা অনুভব করেন। লেখার মাধ্যমে যে একটি স্থানের পরিবেশ–পরিস্থিতি, আচার- বিচার, লোকাচার, উৎসব-অনুষ্ঠানকে ফুটিয়ে তোলার অসাধারণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন লেখক। কুর্নিশ জানাতে হয় তার লেখার গভীরতাকে। ছোট ছোট মুহূর্তকেও তিনি অবলীলায় লেখায় ব্যবহার করে তৈরি করেছেন এক রহস্যময় জগতের। সম্ভবত শিশুমনের রহস্যময়তা এই সবের ভিতরেই তৈরি হয়। তন্ত্র মন্ত্র ভূত পিশাচ এসব ছাড়াও বাস্তব পৃথিবীতেই যে অপার্থিব ভৌতিক জগত রয়ে যায় তা লেখক তার লেখার প্রতি ছত্রে ব্যক্ত করেছেন। বাংলা সাহিত্যের জগতে আগামী দিনে এক অসাধারণ মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত লেখকের পদচারনা সূত্রপাত হয়ে গেল তা বলাই বাহুল্য। ​

ভালো থাকুন সকলে।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Sanjhbati
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.

Popular Writers

Updates

{getWidget} $results={4} $label={recent} $type={list2}