review
বই: ফুসিয়া হাউস
লেখক: তানজিনা হোসেন
প্রকাশনী: বাতিঘর
সতর্কবার্তা: স্পয়লার সমৃদ্ধ আলোচনা
ঘটনা:
বিখ্যাত শিল্পপতি, আর্ট কালেক্টর মৃত জেরল্ড চৌধুরীর স্ত্রী সোহা চৌধুরী হঠাৎ এক রাতে নিজের পশ, পশ, পশ, পশ, পশ, পশ…… (বইতে শব্দটা ইনফিনিট বার বলা হইছে) অবতার ভুলে গিয়ে উদভ্রান্তের মত আচরণ শুরু করলেন। কর্মচারিরা উপায় না পেয়ে পারিবারিক চিকিৎসক শ্যামল দেবনাথকে খবর দেন। ডাক্তার শ্যামল সোহা চৌধুরীকে তার ক্লিনিকে ভর্তি করেন। কিছুটা সুস্থ হয়েই সোহা ম্যাডাম ঘটা করে জানান দেন জেরল্ড চৌধুরী অ্যাজমা এ্যাটাকে মারা যান নাই, সোহা আর শ্যামল তাকে হ*ত্যা করেন।
তদন্তে নামেন পুলিশ অফিসার লোকমান। সাথে এস আই বাবুল এবং আর্ট সমঝদার রুমি। গল্পে যুক্ত হয় একটা রহস্যময় পোভা চিত্র। কাহিনি এমনভাবে আগাতে থাকে, পুরোটা সময় মনে হতে থাকে এই চিত্রটাই সব নষ্টের গোড়া। কিন্তু শেষে গিয়ে জানা যায় অতীতের এক পাপের বোঝা বইতে না পেরে জেরল্ড সাহেব স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করেন। সোহা আর শ্যামল শুধু ওনার ইচ্ছাপূরণ করেন।
ঘটনার অন্তরালে:
জেরল্ড চৌধুরী অক্সফোর্ডে পড়াকালীন সময়ে ত্রিমুখী সম্পর্কে জড়িত ছিলেন সোহা আর চন্দ্রিমার সাথে। প্রেমের ফসল হিসেবে চন্দ্রিমা প্রেগনেন্ট হন। চন্দ্রিমা একবার জেরল্ড সাহেবের বাসায় ফুসিয়া ফুল নিয়ে যান। এই ফুল যার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হয়।
এই আজগুবি কথার পরিপূর্ন সুযোগ নেন পশ সোহা ম্যাডাম। তিনি চন্দ্রিমাকে বলেন প্রেগনেন্সির কথা গোপন করে জেরল্ডের জীবন থেকে চলে যেতে, নাহয় জেরল্ডের সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে (নষ্টলোকের আবার সম্মান নষ্ট!)। চন্দ্রিমা গোপনে নেপাল চলে যান।
এর ৩২ বছর পর কোন কারণ ছাড়াই পোর্ট্রেট ছবি কালেক্টর জেরল্ড হঠাৎ পাগলায়া যান ধর্মীয় পোভা চিত্র সংগ্রহের জন্য। সেই ছবি নিয়ে তার বাসায় আসেন চন্দ্রিমার মেয়ে ফুসিয়া। ফুসিয়াকে দেখে জেরল্ড জানতে পারেন সে তার মেয়ে। এটা মানতে না পেরে জেরল্ড মরে যেতে চান।
এই হচ্ছে মোটাদাগে বেসিক প্লটলাইন। লেখিকার লেখনশৈলি দারুণ। টানা পড়ে যাওয়া যায়। পড়ার সময় মিথ, নেপালি আর্টের ইতিহাস আর মিস্ট্রিতে ডুবে ছিলাম। তবে শেষ করার পরে যখন মাথার মধ্যে পুরোটা নাড়াচাড়া করছি, তখন আসলে ভালোলাগার অনুভূতি চলে গেছে।
আর্ট আর যে ২/১টা বৈজ্ঞানিক কথা ছিল সেগুলোর সাথে কাহিনির কোন সম্পর্ক নাই। খুবই সোজাসাপ্টা মিস্ট্রি। তবে সেই সোজাসাপ্টা মিস্ট্রিতেও গোজামিল।
*জেরল্ড চৌধুরী হঠাৎ কেনো রিলিজিয়াস নেপালি পোভা চিত্রের জন্য ক্ষেপে গেলেন? আপাত দৃষ্টিতে নেপালি আর্ট হিস্ট্রি এবং রহস্যকে টেনে আনা ছাড়া আর কোন কারণ পাই নাই।
*চন্দ্রিমা তার মেয়েকে নিয়ে তিব্বতের লোকালয়ের বাইরে নিভৃত জীবনযাপন করতেছিল। সেখান থেকে ফুসিয়া কিভাবে জানতে পারল জেরল্ড চৌধুরী নেপালের কোন এক আর্ট ডিলারের কাছে পোভা চিত্র খুঁজতেছে? সেই আর্ট ডিলার আবার এক্সিডেন্টে (!) মারা গেছে এবং চিত্র নিয়ে কোন আগাম নোটিশ বা যোগাযোগ ছাড়াই ফুসিয়া হাজির! পুরাই এসপিওনাজ কাজ কারবার।
*ফুসিয়া নেপাল থেকে বাংলাদেশ ঘুরে গেল পাসপোর্ট দিয়ে। কিন্তু তার নাকি ন্যাশনাল আইডি কার্ড নাই এজন্য নেপাল পুলিশ তারে ধরতে পারে নাই। আইডি কার্ড ছাড়া পাসপোর্ট বানানোই তো সম্ভব না। আবার পাসপোর্টেই আইডির সব ইনফরমেশন থাকে।
• সবচে বড় গোজামিল জনরায়। বইয়ের সামনে পেছনে সায়েন্স ফিকশন বলা হইছে। কিন্তু হ্যারি পটার যতটা ইয়াং রোমান্টিক জনরায় পরে, এইটা ঠিক ততটাই সায়েন্স ফিকশন।
আরো টুকিটাকি অনেককিছুই খোঁচাইতেছে। চমৎকার লেখনশৈলির জন্য পাঠ অনুভূতি চমৎকার হলেও পাঠ পরবর্তী অনুভূতি হতাশ করে দিছে আমাকে।