গান্ধর্বী
বাণী বসু
উপন্যাস
নিরলস সাধনা অপালার শিল্পী জীবনের বৈশিষ্ট্য। শেষ পর্যন্ত সংগীত শিল্পী অপালার কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেলেও সে সুরলোককে শ্রুতির পরিবর্তে দৃষ্টিতে ধরার জন্য চিত্রের সাহায্যে নিয়েছে। উত্তর কলকাতার রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত পরিবার তার জন্ম, শৈশবে পিতৃহীন, অসহায় মা দাদার সঙ্গে বিপত্নীক নিঃসন্তান জেঠুর ওপর নির্ভর করে বেড়ে ওঠা। প্রাচীনপন্থী অভিভাবকরা সেখানে ছেলেদের সুরক্ষিত চাকরি আর মেয়েদের সুরক্ষিত সংসার করাকে জীবনে পরমপ্রাপ্তি বলে ভাবে। অতএব অপালার দ্রুত সুপাত্রের সন্ধান তারা করেন। ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা অবহেলিত হয়। অপালা তাই ভাঙ্গা হারমোনিয়াম ধার করা তানপুরা শ্বশুরবাড়ির সন্ধ্যার জলখাবার বানানো সন্ধ্যা আরতি সন্তানদের সঙ্গে দূরত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর বহু বাধার মাঝে দিন কাটাতে কাটাতেও সুরের ওপর অধিকার ছাড়তে পারে না। সংগীত ছাড়া আর সব কিছুর প্রতি তার এক ধরনের শিথিল ভালোবাসা রয়েছে। কিন্তু সুর রয়েছে তার রক্তে মিশে। অপালার সহ শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে আপনাকে বিকশিত করে চলে, আর অপালার অসাধারণ শিল্পীসুলভ সাধনা কোনো মর্যাদা পায় না। জীবনভর সংগীত আর সংসারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার দড়ি খেলায় ক্রমশ ক্লান্ত অপালা শুধু মুক্তির পথ খুঁজে চলে। আপন সন্তানদের মধ্যেও নিজের সাংগীতিক উত্তরাধিকারকে সে সঞ্চার করে দিতে সক্ষম হয় না। তার সন্তানেরা মাটির মাকে চায় শিল্পী মাকে নয়। তাই অপালার আকাশকে নিরেট করে ভরে রাখে সংসারের সামাজিকতা। সকাল সন্ধ্যা কোথাও তার হৃদয়ের বেদনার মুক্তির অবকাশ ছিল না। তার মতো সংবেদনশীল শিল্পীর এতো এক রকম মৃত্যুই। জাগতিক মৃত্যুতে তার মতো শিল্পীর সত্যিকারের মুক্তি ঘটে। বিশ্বসংসার হয়তো তার মূল্য কোনো একদিন বোঝে। কিন্তু তখন বড় দেরি হয়ে যায়। অতি সাধারণ পরিবেশে জন্ম নেওয়া যে কোনও সৃজনশীল শিল্পীর, বিশেষত তিনি যদি একজন নারী হন, তাহলে তাঁর ভবিতব্য বোধহয় এমনই।
রিভিউটি লিখেছেনঃ bubu
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।