বই: দ্রাক্ষানী
লেখিকা: রীমা গোস্বামী দাস
প্রকাশক ও মূদ্রক: প্রতিলিপি পেপারব্যাকস
মূল্য: ১৯৯ টাকা
প্রতিলিপি অ্যাপে এই কাহিনীটি প্রথম দেখেছিলাম। কিন্তু মেম্বারশিপ না থাকায়, পড়তে পারিনি। কিন্তু কপালে ঘি থাকলে কি আর ঠকঠকানির দরকার পড়ে? প্রতিলিপি এফ এম থেকে বিনামূল্যে শুনে ফেললাম আগাগোড়া কাহিনীটি। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই একটি রূপকথা। তারপর কলকাতা বইমেলা ২০২৩-এ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবেই পেয়ে গেলাম সদ্য প্রকাশিত ১৫৫ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি "দ্রাক্ষানী"।
দ্রাক্ষরাজ্যে বিগত দুই শতাব্দী যাবৎ এক অত্যদ্ভুত রীতি পালন করা হয়ে চলেছে। প্রতিবার বিবাহের ঠিক বছর পরে কৌশিকী অমাবস্যায় রাজ্যের আরাধ্যা দেবী দ্রাক্ষানীর সম্মুখে রাজা ধারালো চন্দ্রহাসের এক আঘাতে তাঁর রাণীর শিরশ্ছেদ করে, কর্তিত মুণ্ডটি দেবীর চরণে নিবেদন করেন। অবশিষ্ট দেহাংশটি নিয়ে মহোল্লাসে মাতে রাজ্যবাসী, রাজমহিষীর বলিতে দেবী তুষ্ট হয়েছেন এই আনন্দে। এই রীতি পালন করতে অধিকাংশ রাজারই বংশরক্ষা করতে দেরী হয় কারণ একবছরের মধ্যে নববিবাহিতা রানী যে পুত্রসন্তানের জন্ম দেবেনই এমন কোনোও কথা নেই।
বর্তমান রাজা ইন্দ্রাশিসও একই সমস্যার সম্মুখীন। ষোলোবার বিবাহ করা সত্ত্বেও তিনি পিতা হয়ে পারেননি। প্রতিবার বিবাহ করবার এক বছর পরেই কৌশিকী অমাবস্যায় দেবী দ্রাক্ষানীর চরণে রানীর বলি চড়িয়েছেন তিনি। এই রাজন ইন্দ্রাশিসের সপ্তদশ পত্নী, দ্রাক্ষরাজ্যের রানী হয়ে আসে দরিদ্র কৃষক ঘরের এক পরমাসুন্দরী অষ্টাদশী – ঊর্মি। গরীব ঘরের মেয়ে হয়্বেও ঊর্মি প্রখর বুদ্ধিমতী উপরন্তু প্রখর যুক্তিবাদী ও কুসংস্কারহীন। নিজের প্রাণরক্ষার অভিপ্রায়ে যতো না, তার থেকেও বেশী প্রতি কৌশিকী অমাবস্যায় রানীকে বলি দেওয়ার এই রীতির মধ্যে কোনোও যৌক্তিকতা খুঁজে না পেয়ে সত্য অনুসন্ধান শুরু করে সে। এ বিষয়ে সে সাহায্যলাভ করে তার নব্যনিযুক্ত গুরু ও প্রতিবেশী রাজ্যের অধীশ্বর মহাজ্ঞানী জন্মেজয়ের। উদ্ঘাটিত হতে থাকে কালের গর্ভে নিমজ্জিত থাকা একের পর এক কঠিন সত্য।
কি সেই সত্য? তার সঙ্গে কি অশীতিপর রাজকুলপুরোহিত একদন্তের কোনোও যোগসূত্র আছে? ঊর্মি কি পারবে নিজের প্রাণরক্ষার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রাক্ষরাজ্যের এই কুপ্রথার অবসান ঘটাতে? লেখিকা রীমা গোস্বামী দাস তাঁর এই উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে শুধুমাত্র কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চারই হননি, সেই সঙ্গে তিনি নারীশক্তির উত্থান ও আপাতকথিন পুরুষের অন্তরের গোপনতম স্থানে সুগভীর যন্ত্রণারও বিবরণ দিয়েছেন। কাহিনীতে তন্ত্রমন্ত্র, তান্ত্রিক/আধ্যাত্মিক সাধনার উল্লেখ আছে কিন্তু পাঠক ইচ্ছা করলে সেই স্থানগুলি অনায়াসে এড়িয়ে যেতে পারেন, মূল কাহিনীর রসাস্বাদনে তা বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত ঘটায় না।
পর্যালোচকের রেটিং: ৮/১০
রিভিউটি লিখেছেনঃ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।