Review
Book Name - ঝিন্দের বন্দী
WRITER - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
PUBLISHER - Penguin Books Ltd
LANGUAGE - BENGALI
TOTAL PAGE - 154
PRICE - 300
মধ্যভারতের ছোট্ট স্বাধীন রাজ্য ঝিন্দ। রাজা ভাস্কর সিংহের মৃত্যুর পর শঙ্কর ও উদিত দুই ছেলের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে শুরু হল বিরোধ। অভিষেকের ঠিক আগে শঙ্কর সিং নিখোঁজ হলেন। এদিকে কলকাতার এক বাঙালি ছেলে গৌরীশঙ্কর রায় হুবহু শঙ্কর সিংহের মতোই দেখতে। গোলমাল এড়াতে তাঁকেই শঙ্কর সিং সাজিয়ে সিংহাসনে বসাতে উদ্যত হলেন ঝিন্দের পুরনো কিছু রাজকর্মী। অভিষেক সম্পন্ন, আগে থেকে বিবাহ পর্যন্ত স্থির হয়ে আছে।
কিন্ত সহজে তা মেনে নেবেন কেন উদিত সিং? তিনি তো সবই জানেন। শঙ্কর সিং নিখোঁজ নন, বন্দী করে রাখা হয়েছে তাঁকে। কিন্ত কোথায়? শঙ্কর সিং কি মুক্তি পাবেন? গৌরীশঙ্কর কি লুকিয়ে রাখতে পারবেন তাঁর আসল পরিচয়? তাছাড়া, গৌরীশঙ্করের সঙ্গে এমন চেহারাগত অবিকল সাদৃশ্যই বা কেন থাকবে মধ্যভারতের স্বাধীন রাজ্যের এক রাজকুমারের?
কলকাতার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত রায় দেওয়ান জমিদারবাড়ি। রায়-দেওয়ান কালীশঙ্কর রায় প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে কলকাতায় আসেন এবং কিনে নেন এই জমিদারী। বিয়ে করে সংসারও পেতেছিলেন, কিন্তু সংসারসুখ বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। অজানা আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারা যান কালীশঙ্কর। গল্পের নায়ক গৌরীশংকর রায়, দাদা শিবশঙ্কর রায় ও বৌদির সাথে বর্তমানে এই বাড়িতে বাস করছেন। নিরুপদ্রবেই কাটছিল তাদের দিন।
হঠাৎ একদিন বাড়িতে এসে হাজির হলেন অদ্ভুত বেশভূষার এক ব্যক্তি, নাম ধনঞ্জয় ক্ষেত্রী। তিনি নাকি ঝিন্দ রাজ্যের রাজার বংশানুক্রমিক পার্শ্বচর। সবচেয়ে অবাক করার মত কথা হল তিনি কালীশঙ্কর এর তৈলচিত্র দেখে তাকে চিনতে পারলেন, আর এরা তার বংশধর শুনে নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলেন। এবার সেই অদ্ভুত ব্যক্তি শোনালেন এক আশ্চর্য ঘটনা, আর দিলেন এক অদ্ভুত প্রস্তাব।
গৌরী নাকি দেখতে হুবহু তাদের যুবরাজ শঙ্কর সিংহের মত, যার ক'দিন বাদে অভিষেক। ছোটভাই উদিতের ষড়যন্ত্রে শঙ্করকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এখন তাকে খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত গৌরী যেন তার ভূমিকায় অভিনয় করে তাদের সাহায্য করেন। পদে পদে বিপদের ভয় থাকা সত্বেও বরাবর এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় গৌরী সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ঘটল আরেক ঘটনা, বলা যায় দু্র্ঘটনা। গৌরী প্রেমে পড়ল শংকরের বাগদত্তা ঝড়োয়ার রাজকুমারী/রাণী কস্তূরীবাঈএর। তারপর..... অবশ্যই পড়তে হবে।
কীভাবে এসব রহস্যের সমাধান হলো, তাই নিয়েই অপূর্ব রোমান্স ও রোমাঞ্চে ভরা এই কাহিনী।
এ-কাহিনীর উৎস বিদেশি। Anthony Hope রচিত The Prisoner of Zenda থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। তবে পটভূমি ও চরিত্রাবলীকে অসাধারণ মুনশিয়ানায় পুরোপুরি ভারতীয় করে তুলেছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রত্যেকটি ঘঠনার বর্ণনা, ঝিন্দের, ঝড়োরা রাজ্যের প্রাকৃতিক রূপালঙ্কারের বর্ণনা, এমন কি প্রতি লাইনে লাইনে একটা নতুন নতুন রহস্য সৃষ্টি করে উচ্চমর্যাদায় নিয়ে গেছেন এই উপন্যাসটিকে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়া এই উপন্যাসটি এতো ভালো লেগেছে যা শুধু লিখে প্রকাশ করার মত নয় ।
রিভিউটি লিখেছেনঃ ইন্দ্রিরা