বই: লক্ষ্যভেদী চন্দ্রগুপ্ত
লেখক: আবীর রায়
প্রকাশক ও মূদ্রক: বিভা পাবলিকেশন
মূল্য: ১৯৯ টাকা।
লেখক আবীর রায় সৃষ্ট তরুণ গোয়েন্দা চরিত্র চন্দ্রকান্ত গুপ্ত ওরফে চন্দ্রগুপ্ত। পেশায় সে পাঠ্যপুস্তক ব্যবসায়ী – পিসেমশাইয়ের দোকানে কর্মরত। বাস, চন্দন বসু নামে এক অধ্যাপকের বাড়ির একতলায় ভাড়াটে হিসেবে। অনুসন্ধিৎসু এই যুবক কিছুটা হলেও খ্যাপাটে গোছের – বেশভূষায় বাহূল্য তার না পসন্দ, এমন কি চুলদাড়িও অধিকাংশ সময়েই অবিন্যস্ত থাকে। কথাবার্তায় প্রায়ই অসংযতভাব ধরা পড়ে। যথেষ্ট বুদ্ধি ধরলেও সময় বিশেষে সে যে চরম অনভিজ্ঞতার পরিচয় দেয়, সেটা লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন। আরোও একটা ব্যাপার, চন্দ্রগুপ্ত নিজে মোবাইল ব্যবহার করে না, এ ব্যাপারে বন্ধু চন্দন ওরফে চানুর ওপর সে সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।
এই বইটিতে চন্দ্রগুপ্তের মোট তিনটি অভিযান উপন্যাসাকারে মুদ্রিত হয়েছে। তবে প্রথমেই বলে রাখি, এর কোনটাই কিন্তু তার আবির্ভাব কাহিনী নয়। তাই নিয়মিত চরিত্রগুলির সঙ্গে তার যোগাযোগের কারণ এবং পিসেমশাই বর্তমান থাকতেও এবং তাঁর ব্যবসায় সে যুক্ত থাকলেও কেন যে সে সম্পূর্ণ অনাত্মীয় এক পরিবারে ভাড়াটে হিসেবে থাকে, শুধুমাত্র এই কাহিনীগুলি পড়ে সেসব তথ্য সম্বন্ধে সম্যক ধারণালাভ করবার কোনোও সম্ভাবনাই নেই।
প্রথম কাহিনী ~ সেনাপতি : চন্দ্রগুপ্ত ও চন্দনকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক প্রাক্তন অফিসার বিনায়ক পাল চৌধুরী নিজের ড্রাইভারকে দিয়ে ডাকিয়ে পাঠান একটি কেসের ব্যাপারে। ফটোফোবিয়ায় আক্রান্ত বিনায়কবাবুর মুখ থেকে কেসের বিবরণ শুনে দুই তরুনই বিস্ময়াবিভূত হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীর অন্য এক অফিসার বিনায়কবাবুর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এক ঘৃণ্য চক্রান্ত করে কোনোও এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সাহায্যে তাঁর একমাত্র কন্যাকে নির্মমভাবে হত্যা করায়। ফলে বিনায়কবাবু প্রতিশোধ নিতে চান, মেয়ের সেই খুনীকে তিনি হত্যা করতে চান কিন্তু অবাক কাণ্ড মূল ষড়যন্ত্রকারীকে তিনি মারতে চান না। সেই খুনীর নাম বিনায়কবাবুর জানা থাকলেও তিনি চন্দ্রগুপ্তকে তা বলেন না। প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রগুপ্তের উদ্দেশ্যে তিনি একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। এবার চন্দ্রগুপ্ত কি হত্যাকাণ্ড আটকাতে পারবে? কাহিনীটিতে মৃৎশিল্পের এক বিরাট ভূমিকা আছে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত পটুয়াপাড়া কুমোরটুলির অবতারণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই তরুণের আবাসস্থল বাগবাজারের বিখ্যাত “মায়ের ঘাট”-এর নৈশরূপের কথা।
পর্যালোচকের রেটিং : ৬/১০
দ্বিতীয় কাহিনী ~ রক্তনদী : চন্দ্রগুপ্ত ও চন্দন লাটাগুড়ি ভ্রমণে গিয়ে এক জটিল রহস্যজালে জড়িয়ে পড়ে। একের পর এক দুধের শিশু নিখোঁজ হচ্ছে। পুলিশ কোনোও কিনারা করতে পারছে না। কৌতূহলী চন্দ্রগুপ্ত খোঁজ নিয়ে জানতে পারে বেয়াল্লিশ বছর আগেও না কি এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিলো, পরপর সাতটি শিশুকে অপহরণ করে বলি দেওয়া হয়েছিলো তন্ত্রাচারের নামে। এবারেও কি তাই ঘটছে? অপহৃত ছ’টি শিশু ইতিমধ্যেই নিহত। সপ্তম শিশুটিকেও অপহরণ করা হয়েছে। তার মৃত্যুকে কি চন্দ্রগুপ্ত আটকাতে পারবে? পর্বত ও অরণ্যানীর অপরূপ সৌন্দর্যের আড়ালে এই নৃশংস নরমেধ যজ্ঞের হোতা কে? সে কি কোনোও পুরুষ বা নারী? না কি কোনোও বৃহন্নলা? চন্দ্রগুপ্ত-চন্দনের এই রোমহর্ষক অভিযান সম্ভবতঃ এই গ্রন্থের শ্রেষ্ট কাহিনী।
পর্যালোচকের রেটিং : ৯/১০
তৃতীয় কাহিনী ~ পুনশ্চ : অধুনা বাংলাদেশের যশোর থেকে ইন্দিরা গুহ নামে এক ধনী অথচ অপ্রকৃতিস্থ মহিলা কলকাতায় এসে চন্দ্রগুপ্তকে তাঁর বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া পুত্রের অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিতে চান। মহিলাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবে চন্দ্রগুপ্ত প্রথমটায় অতোটা গুরুত্ব না দিলেও সাক্ষাতের অব্যবাহিত পরেই ভাড়াটে খুনীর হাতে মহিলার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সে তদন্ত শুরু করে। ফলতঃ দ্রুত সে শত্রুবাহিনীর নিশানায় চলে আসে এবং নিজের বুদ্ধি ও বাহুবলে শত্রুকে আইনের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয় সে। এবার চন্দনকে নিয়ে চন্দ্রগুপ্ত ছোটে যশোর। সেখানে তদন্ত চালিয়ে চন্দ্রগুপ্ত কি মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে? প্রয়াত ইন্দিরা গুহর অপহৃত পুত্র আজও বেঁচে আছে? এই কাহিনীটি শুরুতে যতোটা চমকপ্রদ বলে মনে হয়েছিলো আমার, যতো এগিয়েছি ততোই যেন হতাশ হয়েছি। বিশেষতঃ সমাপ্তিতে লেখক অত্যধিক চমক এবং আবেগ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, যা আমার বুদ্ধিতে নিতান্তই আনাবশ্যক বলে মনে হয়েছে। তবে, এ মতামত একান্তই এই পর্যালোচকের ব্যক্তিগত।
পর্যালোচকের রেটিং : ৩.৫/১০
রিভিউটি লিখেছেনঃ Collected
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।