উপন্যাস - পাক সার জমিন সাদ বাদ
ঔপন্যাসিক - হুমায়ুন আজাদ
ঐতিহ্যশালী অখণ্ড ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালে দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুটো দেশে ভাগ হয়ে যায়।একটি ভারতবর্ষ ও অন্যটি পাকিস্তান নামে।পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নাম নিয়ে। এই পবিত্র নামধারী দুই স্থানের মধ্যে মূলত ভাষাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।এই মানসিক লড়াইকে কেন্দ্র করেই ১৯৬০ সাল পরবর্তী ঘটনায় এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
আলোচ্য উপন্যাসে উর্দু জাতীয় সংগীত "পাক সার জমিন সাদ বাদ"কে সার্বিকভাবে দেশটির উভয় স্থানে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই মূল ঘটনা কেন্দ্র আবর্তিত ও বিবর্তিত হয়েছে। একদিকে কনকলতা (হিন্দু) ও হুজুরের প্রেম কাহিনি অন্যদিকে পাক সার জমিন সাদ বাদ সংগীতকে সার্বজনীন করতে জোর পূর্বক ধর্মের নামে শাসন ব্যাবস্থার প্রয়োগ। যা বর্তমান প্রগতিশীল সমাজে কাছে বিভীষিকাময় অন্ধকার যুগের পরিষ্কার ছবি বলেই মনে হয়। কেননা ধর্মীয় শাসন ব্যাবস্থাকে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ হয়ে মানুষের উপর নির্বিকার নিপীড়ন কিংবা অবলীলায় গণহত্যার, ব্যাভিচারের ছবি তাও আবার ধর্মের নামে। সর্বশক্তিময় আল্লার নির্দেশ অনুযায়ী ধর্মভীরু মানুষেরা ধর্ম পালন করে।তাই ধর্মীয় মানুষরা আল্লার পথকে প্রসারিত করার জন্য মানব সমাজের বিশেষত অন্য ধর্মের মানুষের উপর এই পরিকল্পনা মাফিক সৃষ্টি করতে পারে না বলে ধারনা।কারন প্রথমেই তারা আল্লার নির্দেশকে অমান্য করে যা ধর্মীয় মত অনুযায়ী গর্হিত অপরাধ।
সাহিত্যের যে কোন প্রকরণেই লেখক তার নিজস্ব জীবন দর্শনকে জানতে কিংবা অজান্তেই ব্যবহার থাকে।সেইসূত্রে বলতে পারি হুমায়ুন আজাদ ও তার ব্যতিক্রম নয়। কেননা এই উপন্যাসে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বিকৃত মনস্ক এক উদ্ভট যৌন আকাঙ্খায় লিপ্ত হওয়ার লিপ্সা প্রতিনিয়ত চালিয়েছে। মৌলবাদের হিংসাত্মক রূপ হিসাবে ভৈরবপুরকে ওমরপুর,শ্যামসিদ্ধি হবে আলিগঞ্জ হবে এটা স্বাভাবিক কেননা ধ্বংস না করলে শাসক বৃহৎ কিংবা মহৎ হয় না। ধর্মের নামে শাসনকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে "জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ " ধ্বনি শাসকে তুষ্ট করে কিন্তু জনমানসকে সেটা করে না কোন দিন করে নি। বর্তমান সময়ে পরিবর্তন করে " উপাধ্যায়" স্টেশনের নাম আর ও অনেক আছে তালিকায়।
কনকলতাকে বিয়ে করে হুজুরের সঙ্গে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছে যাতে করে প্রগতিশীল চেতনাকেই স্বীকার করে বলেই মনে হয়।কনকলতা বলেছে-'হুজুর আমার সুখের শেষ নেই।আমি আমার সুখ প্রকাশ করলাম।'
লেখককে বিকৃত মনস্কতার ইসলাম ধর্মের নিষিদ্ধ বিষয় গুলিতে যে সমস্ত মানুষেরা লিপ্ত থাকবে, পিয়াসী হবে তাদেরকে ঐ ধর্মের মধ্যে পড়ে কি? একই মহিলা সংসর্গে পিতা ও পুত্র লিপ্ত। এটা বাস্তবাতার সাথে মেলে না। সুরাপান বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিংবা শুকরের মাংস। এগুলিকে সংযুক্ত করে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি না করলে বাস্তবতা ছিল। প্রপার ওয়েতে মেধার যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত না করতে পারলে বিপরীত পথ পাড়ি দিয়ে প্রচারের আলোকে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। লেখক সেই পথই অনুসরণ করছেন-যেটাকে নেতি বাচক বাহবা বলা যেতে পারে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ ড.মুস্তাক আহমেদ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।