বইয়ের নাম:- আরশিনগর
লেখক:- সাদাত হোসেন
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ২৭১
মূল্য- ৪৫০ টাকা
এই উপন্যাসে লেখক বলেছেন যে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল 'সময়'। একটা মানুষের জীবন পাল্টে যাওয়াটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। যেমন মজিবর মিয়া, যে ছিল লতু হাওলাদারের জমিতে খেটে খাওয়া একজন চাষী।ট্রলার কেনার পর তার জীবন বদলাতে শুরু করলো। একটা সময় সে হয়ে উঠলো গ্রামের চর্চিত মানুষগুলোর মধ্যে একজন। তার যত উন্নতি ঘটলো শত্রুও বাড়তে থাকলো।
অন্যদিকে মা হারা আরশি, ধীরে ধীরে তার বাবা আর ঠাকুমার আদরে, যত্নে বেড়ে উঠতে লাগলো।
তারও কিছু বছর পর মজিবর মিয়া বিয়ে করলো। সেই সৎ মা লাইলি শুরুতে আরশির সাথে ভালো ব্যবহার করলেও যখন সে নিজে মা হলো , সে আর আরশিকে সহ্য করতে পারতো না, অত্যাচার করতো। এরপর একদিন মজিবর মিয়ার উপর আঘাত নেমে এলো। ফলে সে পঙ্গু হয়ে পড়লো। এর মাঝেই তার মা আম্বরি বেগম মারা গেলেন। আরশি হয়ে উঠলো একেবারে একা। তাকে সবসময় সহ্য করতে হতো লাইলীর মার, গালাগাল, অত্যাচার।
এরপর আরশিকেও হত্যা করার চেষ্টা হয়। তবে নিয়তি তাকে বাঁচিয়ে দেয়। এরপর ইমাম সাহেব মারফত আরশি পৌঁছায় ঢাকায় রুবিনার কাছে।এই রুবিনাই আরশি কে জীবনদান করেছিল অনেক ছোটবেলায়। তাই তার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করে ইমাম সাহেব তাকে ওখানে রেখে আসেন। এরপর দিন যায় আর তার জীবনে আসে এক মোড়। আশীষ হল শুকরঞ্জন ডাক্তারের ছেলে, তারই স্ত্রী মিলি তখন পুত্র শোকে প্রায় পাগল। তখনই ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তারা আরশি কে নিয়ে আসেন নিজেদের কাছে। এরপর আরশি কে পাঠানো হয় হোস্টেলে।
এর মাধ্যমেই কবি বুঝিয়েছেন যে মানুষের জীবনে থাকে অসংখ্য ছোট বড়ো অধ্যায়। সময়ই হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। সময়ই মানুষকে শূন্য থেকে পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে।আর সময়ের ক্রমাগত আঘাতে আরশি ও হয়ে ওঠে কঠিন। এরপর তার জীবনে অনেক বদল আসে। একদিন সে ফিরে তার গ্রাম যযাতিপুরে। সেদিনই তার কোলে তার বাবার শেষ নিশ্বাস পরে। এরপর এক বৃষ্টিস্নাত দিনে তার মা- বাবার কবরকে পিছনে ফেলে আরশি এগিয়ে যেতে থাকে তার জীবনের পথে।
তবে এই এগিয়ে যাওয়া, যতটা বেশি এগিয়ে যাওয়া তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাওয়া। আমরা জন্ম থেকে যে এতগুলো বছর পার করি, এত লড়াই করি, সেসবই শুধুমাত্র মৃত্যুর অপেক্ষায়। প্রাণীজগতে সকলের জন্মই হয় মৃত্যুতে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। আসলেই এই জগৎ হল উল্টো জগৎ... আরশিনগর।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।