বই : বিষহরি
লেখক : তমোঘ্ন নস্কর
প্রকাশক : অরণ্যমন
মূল্য : ২৫০ টাকা
'বিষহরি' বইটি সংগ্রহ করেছিলাম বইমেলা (২০২৩) থেকে। বইটিতে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর অলৌকিক আখ্যান বর্ণিত রয়েছে। লেখকের লেখনীর সাথে পরিচয় হয়েছিল 'দেও' বইটির মাধ্যমে। গল্পের মুখ্য চরিত্র শ্রীশচন্দ্র ন্যায়বান পেশায় ডাক্তার,দেশ-বিদেশ ঘুরে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। তিনি তার জীবনের কিছু ঘটনা তাঁর নাতিদের বলেছেন এই বইটিতে।মোট নয়টি গল্প রয়েছে এখানে -
১) দেবীকুসুম :- এই গল্পে ন্যায়বান মহাশয় তার ছোট ভাইয়ের ছোটবেলার কাহিনী শোনান। তাঁর অসুস্থ ছোট ভাই এক কবিরাজ এর কাছে গিয়ে সুস্থ হলেও রক্ষরাজ নৈঋত তার ওপর কোনোভাবে ভর করে। কিভাবে এই উপদেবতার হাত থেকে তিনি রক্ষা পাবেন তা এখানে বর্ণিত আছে।
২) বাবা প্রেতেশ্বর :- এখানে লেখকের মামা 'ফোঁপর ' - এর পাল্লায় পড়েছিলেন। তাকে উদ্ধার করতে আসেন গুনিন ঠাকুরদা। দেবতা পঞ্চাননের দয়ায় শেষমেশ এই 'ফোঁপর' বিদায় নেয়।
৩) বাঘরাই :- এখানে মা বাঘরাই বুড়ির কথা বর্ণিত আছে, যিনি বাউড়ীদের রক্ষক। এখানে দেবী বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বরাবরই গ্রহণ করেন। তাই অরণ্যে বরাহ শিকার নিষিদ্ধ কিন্তু এক সাহেবের ভগিনী বরাহ হত্যা করে এবং তার শেষ পরিণতি কি হলো, তা এই গল্পে রয়েছে।
৪) পরীক্ষিৎ ঠাকুর :- পরীক্ষিৎ ঠাকুর একজন মানুষ ছিলেন। শ্যাম রায়কে তুষ্ট করে তিনি খরা প্রবণ এলাকায় বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে মানুষের কাছে দেবতায় পরিণত হন।
৫) বিষহরি :- বিষহরি গল্পটি এই বইয়ের মূল গল্প, এটির নামানুসারে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। এই গল্পে ন্যায়বানদের পারিবারিক ইতিহাস বর্ণিত আছে। হলধর ও চক্রধর দুই ভাই একজন ধর্মের উপাসক এবং অপরজন অর্থলোভী। কিভাবে ধর্মের জয় ঘটিয়ে জমিদারি পত্তন হল তাই গল্পের মাধ্যমে জানা যায়।
৬) রক্তঋণ :- এই গল্পে জ্বরাসুরের বর্ণনা আছে। এছাড়াও দেবী রক্তাবতীর কথা আছে এখানে।
৭) দয়াল-পির :- এখানে আছে মানিক পীরের কথা। তাকে যারা খেতে দেয় তাদের গো সম্পদ বৃদ্ধি হয়। ইনি গো সম্পদ রক্ষা করেন।
৮) মা কালষন্ডা :- এখানে দেবী কালষন্ডার আখ্যান রয়েছে, যার বাহন ষাঁড়। যিনি নারীর অবমাননা করেন মা তাঁর বাহন পাঠিয়ে তাকে শাস্তি দেন। এখানে এরকম একটি ভয়ংকর গল্প রয়েছে।
৯) হালকাঠি বাবা :- এখানে নৌকার হালকে পুজো করার একটি প্রাচীন প্রথা রয়েছে। এছাড়া খুব সুন্দর ভাবে একটি নৌকা যাত্রার বর্ণনা রয়েছে এই গল্পে।
শুধু লেখকের লেখনী নয় তার সাথে শ্রী ওঙ্কারনাথ মহাশয়ের অলংকরণ বইটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। বইটি পড়ার সময় চোখের সামনে গল্পের চিত্রগুলি ফুটে উঠেছিল।লেখককে অনুরোধ করবো আরও এরকম অলৌকি আখ্যান পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ কণিষ্ক
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।