ফাইভ অন এ ট্রেজার আইল্যান্ড
এনিড ব্লাইটন
ফেমাস ফাইভ সিরিজ
ফাইভ অন এ ট্রেজার আইল্যান্ড এনিড ব্লাইটন রচিত ফেমাস ফাইভ সিরিজের প্রথম বই।এটি ১৯৪২ সালে ব্রিটেনে প্রথম প্রকাশিত হয়।
চারজন কিশোর কিশোরী- অ্যানি,জুলিয়ান,ডিক, জর্জিনা(যে নিজেকে জর্জ বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসে এবং সবসময় নিজেকে ছেলে হিসেবে কল্পনা করে) এবং জর্জের কুকুর টিমোথি এই হলো ফেমাস ফাইভ। আট নয় বছর আগে কালেরকন্ঠ পত্রিকার টুনটুনটিনটিন নামক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ফেমাস ফাইভের কিছু কাহিনী ধারাবাহিকভাবে কমিকস আকারে প্রকাশিত হয়েছিল,তখনই প্রথম এনিড ব্লাইটনের নাম শুনি,তারপর অনেক বছর পর ফেমাস ফাইভের প্রথম বইটি পুরো অরজিনাল ভার্সনে পড়ার সৌভাগ্য হলো।
স্পয়লার অ্যালার্টঃ গল্পের শুরুতে দেখা যায় অ্যানি,জুলিয়ান এবং ডিক এই তিন ভাইবোন তাদের আসন্ন গ্রীষ্মের ছুটিতে কোথায় কাটাবে এই নিয়ে আলোচনা করার সময় কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনা। শেষে তাদের মা তাদেরকে তাদের চাচার বাসা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কিরিন কটেজে এবারের গরমের ছুটি কাটাতে অফার করে এবং বলে ওখানে তাদের সময় অনেক ভালো কাটবে। মায়ের কথামত তিন ভাইবোন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে কিরিন কটেজে যায়।ওখানে গিয়ে তারা তাদের চাচা কুয়েন্টিন,তার স্ত্রী ফ্যানি এবং চাচাতো বোন জর্জিনার সাথে পরিচিত হয়।তাদের চাচা কুয়েন্টিন এবং চাচাতো বোন জর্জিনা একটু অদ্ভূত স্বভাবের মানুষ। মি.কুয়েন্টিন একজন বৈজ্ঞানিক, সে সবসময় কম কথা বলে,সবার সামনে গম্ভীর হয়ে থাকে। কিরিন কটেজে অ্যানি এবং তার ভাইয়েরা যখন তার চাচার সাথে প্রথম পরিচিত হয় তখন মি.কুয়েন্টিন তাদেরকে তেমন একটা পাত্তা দেয়না,বেশ তুচ্ছ দৃষ্টিতে তাদেরকে স্বাগতম জানায়। অন্যদিকে মি.কুয়েন্টিনের মেয়ে অর্থাৎ অ্যানিদের চাচাতো বোন জর্জিনা নিজেকে একজন মেয়ে বলে পরিচয় দিতে লজ্জ্বাবোধ করে।সে সবসময় ছেলেদের মত সাজপোশাকে থাকে,এবং তাকে যদি কেউ জর্জিনা বলে সম্মোধন করে তবে সে সাড়া দেয়না।কিরিন কটেজে যাওয়ার প্রথম কয়েকদিন অ্যানি এবং তার দুই ভাইয়ের সাথে জর্জের কোন বন্ধুত্ব হয়না।প্রথম কয়েকদিন জর্জ ওদের সাথে কোন কথাই বলতো না,এবং অ্যানির অতিরিক্ত মেয়েলিপনার জন্য অ্যানিকে দেখতেই পারতোনা। কিন্তু কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর কাজিনদের ভিতর অল্প অল্প কথা হয় এবং ক্রমে তাদের ভিতর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।তারা একসাথে তাদের ঘরের পাশের সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায় এবং জর্জের কুকুর টিমোথির সাথে অ্যানিদের পরিচয় ঘটে।টিমোথিকে জর্জ তার বাবা মি.কুয়েন্টিনের নিষেধক্রমে বাসায় রাখতে পারতো না।
সমুদ্রসৈকত থেকে একটু দুড়ে সাগরের মাঝে ছোট একটি দ্বীপ ছিল,জর্জ তার কাজিনদেরকে বলে এই দ্বীপটির নাম কিরিন দ্বীপ এবং এটি তাদের মালিকানাধীন।দ্বীপটির মাঝে একটি ভগ্নপ্রায় পুরনো দূর্গ ছিল। একদিন নৌকায় করে কিরিন দ্বীপে যাওয়ার পথে, জর্জ তার কাজিনদের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখায়,জর্জ বলে এই জাহাজটি ছিল তার এক পূর্ব পুরুষের। শোনা যায় তার পূর্ব পুরুষ এই জাহাজের ভিতর স্বর্ন মজুদ করেছিলেন কিন্তু ডুবুরিরা ধ্বংসস্তূপের মাঝে অনুসন্ধান করলেও কোন সোনা খুঁজে পায়নি। জর্জের মুখে এই ঘটনা শোনার পর বাকিরা রোমাঞ্চিত হয় এবং ঘটনাক্রমে এই গুপ্তধন উদ্ধারের অভিজানে নেমে পড়ে। অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা,জীবনের ঝুঁকি এবং লোভী মানুষদের হুমকির মাঝ দিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত গুপ্তধন উদ্ধারে সক্ষম হয়।
এই বইটি একটি কিশোর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর সংকলন হলেও বড় পাঠকদেরও ভালো লাগবে। বাংলায় আমরা পান্ডব গোয়েন্দার কথা জানি,পান্ডব গোয়েন্দার স্রষ্টা ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় মূলত ফেমাস ফাইভের অনুকরনেই বাবলু বিলুদের তৈরি করেছিলেন।তবে পান্ডব গোয়েন্দার কাহিনির থেকেও ফেমাস ফাইভের কাহিনী বেশি আকর্ষনীয় মনে হয়েছে। অনেক সাবলীল ইংলিশে লেখা,কাহিনীও অনেক গতিশীল, পড়ার সময় ক্লান্তিবোধ হয়না।যারা প্রথম ইংরেজি বই পড়তে চায় তারা এই বইটি দিয়ে শুরু করতে পারে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Abdullah Tahsin
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।