হায়রোগ্লিফের দেশে
লেখক - অনির্বাণ ঘোষ
প্রকাশক - বুক ফার্ম
"শিক্ষিত" শব্দটির ধড়ে মাথাস্বরূপ একটা "স্ব" বসিয়ে দিলে, সেই পূর্ণাঙ্গ দেহস্বরূপ শিক্ষা যে কতই না রোমাঞ্চের জন্ম দিতে পারে, তা হয়তো অজানাই থেকে যেত গল্পপাঠের অভ্যাসে আসক্ত না হলে। অবশ্য এই আত্মোপলব্ধির কারণও আছে যথেষ্ট। স্কুলে পড়াকালীন ইতিহাস বিষয়টি তার অগুন্তি ঐতিহাসিক ঘটনা, নীরস সাল-তারিখ, আর অজস্র চরিত্র এবং তাদের ঘটনাবলী নিয়ে এমন এক ভীতিপ্রদভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল যে তার সাথে সখ্য গড়ে ওঠা তো দূরের কথা, সে বই দেখলেই বিতৃষ্ণার ভাব হত।
যদিও সেটা আমারই ব্যর্থতা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেই ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠে ইতিহাসের অন্দরমহলে উঁকি দেওয়ার কৌতূহলও ছিল যথেষ্ট। সেই কৌতূহলের আগুনে অনেকটা ঘিয়ের কাজ করেছে এই বইটি।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা অনেকের কাছেই বিস্ময়। কিন্তু মিশরীয় সভ্যতা মানে শুধুই পিরামিড নয়, শুধুই কিছু বিস্ময়কর ধর্মীয় বিশ্বাস আর মন্দিরের ইতিহাস নয়। খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজারেরও বেশি সময় আগে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার বৈজ্ঞানিক উন্নতি, স্থাপত্য, চিন্তাধারা, উত্থান পতন অথবা মানসিকতার পরিচয় পেলে অবাক হতে হয়। আবার সুদূর কলকাতার সাথেও যে মিশরের সূক্ষ্ম যোগাযোগ রয়ে গেছে কোথাও, মিশরের অজস্র মনিমানিক্য ছড়িয়ে আছে কলকাতার বুকেও, এমনকি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনেও, সে তথ্যও বেশ অভিনব।
গল্পের মূল কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের দুই পড়ুয়ার মাধ্যমে, যাদের কাছে ইজিপ্টের রহস্যাবৃত ইতিহাসের দরজা খুলে দিয়েছে ভবেশদা নামে এক বইয়ের দোকানের মালিক। তারই জবানিতে একের পর এক গল্প স্রোতের মত বয়ে চলে। ইতিহাস সমৃদ্ধ তথ্য, অথচ অতিরিক্ত তথ্যের ভারে পাঠককে পর্যুদস্ত করে ফেলেননি লেখক। বিশেষত, লেখার সাথে দেওয়া ছবিগুলো বিশেষভাবে আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।
যদিও, এই বই সেভাবে ইতিহাস বিশেষজ্ঞ বা গবেষকদের জন্য নয়। তবে মিশর সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করতে চাইলে, বইটি অবশ্যই সুখপাঠ্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Sharbari
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।