review
মরণের ডঙ্কা বাজে
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশোর উপন্যাসের মধ্যে "চাঁদের পাহাড়" তো জনপ্রিয় বটেই, কিন্তু তার সাথে আরোও কিছু ভালো ভালো উপন্যাস কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছিলেন। যেমন, এই বইটা - "মরণের ডঙ্কা বাজে", জাপান চীন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা অসামান্য এক উপন্যাস।
সুরেশ্বর বাংলাদেশের দেশের ছেলে, এক ওষুধ ফার্মে চাকরি করতে বার্মায় যাচ্ছিল। জাহাজেই পরিচয় হলো সদ্য ডাক্তারি পাশ বিমলের সাথে। কিন্তু বার্মায় পৌঁছে দুজনের জীবন এক অন্যদিকে বয়ে গেল। চীনা কনসুলেট অফিস তাদের এক কাজের অফার দিল। যুদ্ধের ফলে জাপানি আক্রমণে দেশের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। দেশে ডাক্তার, ওষুধের খুব অভাব। বাইরে থেকে গোপনে ডাক্তার টিম গঠন করে, ওষুধ যোগাড় করে চীনে পাঠাতে চায় কনসুলেট। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বিমল, সুরেশ্বরদের খুব প্রয়োজন তখন।
এতেই দুই বন্ধুর জীবন বদলে গেল। চীনে পা রাখল তারা। পরিচয় হলো প্রফেসর লি এর সাথে। তিনি তখন তার ছাত্রদের নিয়ে যুদ্ধে আহত মানুষের সেবাতেই ব্যস্ত, আপাতত নিজের গবেষণা বন্ধ করেছেন তিনি। দেশ বিপন্ন, জাপানিরা অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছে চীন। এগিয়ে এগিয়ে আসছে তারা। সাংহাই ধরে এগোচ্ছে। নিষ্ঠুরতার কোনো সীমা নেই। আহতদের চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিচয় হয় এলিসের সাথে। মেধাবী ছাত্রী এলিস শুধুই সেবার আগ্রহে দেশ ছেড়ে চলে এসেছে চীনে। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার জাপানি যুদ্ধ বিমানের দাপট চলে। জাপানি বোমার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে আমজনতা। যখন তখন বোমাবর্ষণ করে তারা। নিমেষেই ধ্বংসস্তূপ করে দেয় সবুজ ঘেরা গ্রাম, বা সাজানো শহরপল্লী। মৃতদেহ, রক্তপাত, আহত মানুষের অসহায় চিৎকারের কোনো বিরাম নেই। তার মাঝেই বিমল আর এলিস নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবার শপথে এগিয়ে যায়। এগিয়ে যান প্রফেসর লি, যুদ্ধ থামলে আবার অধ্যাপনা, গবেষণায় ফিরবেন, আপাতত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অনেক কাজ তার।
শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না
পরো পরো যুদ্ধের শয্যা
----- সুভাষ মুখোপাধ্যায়
রিভিউটি লিখেছেনঃ সৌমেশ পাল
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।