Get PDF go here PDF Books Contact Us

নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা - সন্মাত্রানন্দ Nastik Ponditer Vita by Sanmatrananda

নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা - সন্মাত্রানন্দ Nastik Ponditer Vita by Sanmatrananda
boibd
review 
গ্রন্থ - নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা 
লেখক - সন্মাত্রানন্দ ( Sanmatrananda Sovon )


      (বাঙালি অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ঙ্কর 
      জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপঙ্কর 

                        ---- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত) 

      রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "ঘাটের কথা" গল্পে লিখেছিলেন-- "পাষাণে ঘটনা যদি অঙ্কিত হইত তবে কতদিনকার কত কথা আমার সোপানে সোপানে পাঠ করিতে পারিতে। পুরাতন কথা যদি শুনিতে চাও, তবে আমার এই ধাপে বইস; মনোযোগ দিয়া জলকল্লোলে কান পাতিয়া থাকো, বহুদিনকার কত বিস্মৃত কথা শুনিতে পাইবে।" ; এটা ছিল এক নদী ঘাটের আত্মকথা। ঘাট মানেই বহু জনের যাওয়া আসা বছরের পর বছর ধরে। কেউ আজ আসেন, কেউ আগামীকাল আসবেন, আবার কেউ তো গতকাল এসেছিলেন। তাদের কথাগুলো ঘাটের জলের প্রতিটি ঢেউয়ে ঘুরে বেড়ায় যেন। কখনও এক ঢেউ আরেক ঢেউকে অতিক্রম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে, ছাপিয়ে উঠে মিশে যেতে চায়। কেমন হত, যদি আমাদের অতীত, বর্তমান সবকটা সময় এইভাবেই মিশে যেতে চায়। শত শত বছর ধরে কত মানুষ এলেন, কত মানুষ চলে গেলেন। কিন্তু ভাবতে ইচ্ছে করে, কেমন হত যদি এই চলে যাওয়া আর চলে আসা মানুষের মধ্যেকার সময়রেখা মুছে দেওয়া যায়! বাস্তবতা বিচার করে এই ভাবনা অবশ্যই নয়, এটা হলো সাহিত্যিক মনের কল্পনার ভাবনা। ভাবজগতের কল্পনার এক স্তরে যেন ধরা হলো, সময় এক টিলার মতো, আমরা আছি টিলার এদিকে, আর ঠিক টিলার ওপারেই আছেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। দূরত্ব এক সামান্য টিলার। এই টিলাটুকু অতিক্রম করলেই আমরা তাদের দেখা পেয়ে যাবো। লেখক সন্মাত্রানন্দ এইভাবেই একসাথে তিনটি সময়কালকে দেখতে চেয়েছেন। এইরকম একটা কল্পনার পরীক্ষামূলক সাহিত্যকর্ম আগে কখনও আমার মতো সামান্য পাঠকের চোখে পড়েনি। পাষাণে ঘটনা অঙ্কিত না হোক, জগতে ঘটা ঘটনাগুলো এইভাবেই অঙ্কিত থাকতে পারে কোনো এক লেখকের মনের ভিতর। 

        এই গ্রন্থে সবচেয়ে পুরানো সময় দশম একাদশ শতক, যেটা ধরে রেখেছে বঙ্গদেশের এক রাজপুত্রের কথা। রাজপুত্র চন্দ্রগর্ভ সামাজিক স্তরে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে উঁচু-নীচু ভেদ এবং স্তরকেন্দ্রিক অহংকারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন। বৈষম্যের কারণ নিয়ে তিনি চিন্তাশীল। কে দেবে তার উত্তর! রাজপুত্রের আচরণ রাজপুত্রের মতো নয় কেন, রাজার পুত্র হয়েও সব স্তরে তার যাওয়া আসা দেখে ক্ষুব্ধ অন্যরাও। কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর চাই যে! জঙ্গলের মধ্যে আছেন মহর্ষি জিতারি, তার সাথে দেখা করলেন তিনি। কিন্তু অন্তরের তৃষ্ণা মেটে না কিছুতেই। ওদিকে কুন্তলা প্রাণপনে চায় কেবলমাত্র তাকেই। কিন্তু চন্দ্রগর্ভ তাকে প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করলেন না। ওদন্তপুরী মহাবিহারে শ্রামণ্য দীক্ষা নিলেন তিনি। জ্ঞানের জগতে বিচরণ করতে তার ভালো লাগে। জ্ঞান যেন তার চিরসঙ্গী। জগতে প্রজ্ঞার আলো ছড়াতে যিনি এসেছেন, তিনি হলেন দীপঙ্কর! জ্ঞান তৃষ্ণায় তিনি গেলেন সুমিত্রা বা সুবর্ণদ্বীপে। ততদিনে চন্দ্রগর্ভ ছাড়িয়ে তিনি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। যুক্তি দিয়ে বিচার, চোখ বন্ধ করে কিছু না মানা নীতিতে চলায় সমালোচিত তিনি। যুক্তিভিত্তিক মমনশীলতার জন্য কেউ কেউ তাকে বললেন "নাস্তিক পণ্ডিত"।

       বিক্রমশীল মহাবিহারে অধ্যক্ষ হলেন তিনি। পাণ্ডিত্যের খ্যাতি ছড়িয়ে গেল দূর দূর দেশেও। একদিন তিব্বত থেকে রাজ প্রতিনিধি এলেন বিক্রমশীল মহাবিহারে। বৌদ্ধধর্ম তার স্বাভাবিকতা হারিয়েছে তিব্বতে। সেখানে চলছে নানান কুসংস্কার, মদ্যপান, ব্যভিচার, অরাজকতা। ধর্মের সংস্কার করা ভীষণ জরুরি। একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির ভীষণ প্রয়োজন যিনি এই তমসাঢাকা পার্বত্য অঞ্চলে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালতে পারবেন। পণ্ডিত দীপঙ্করকে আজ তিব্বতে ভীষণ প্রয়োজন। অনেক চিন্তা ভাবনার পর রাজি হলেন পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। আবার সেই দূরদেশে পাড়ি দেওয়া দুর্গম পথ অতিক্রম করে। 

        এই কাহিনী ছাড়া এই গ্রন্থে আরোও দুটো সময় তুলে ধরা হয়েছে। ত্রয়োদশ শতকে তিব্বতি লামা চাগ লোচাবা এসেছিলেন পণ্ডিত দীপঙ্করের জন্মভূমি দেখতে। শ্রমণ হয়েও তিনি প্রেমে পড়লেন এক রহস্যময়ী অভিজাত নারী স্বয়ংবিদার। আবার অন্যদিকে একুশ শতকের অমিতায়ুধ আর জাহ্নবীর প্রেম। দশম- একাদশ শতক, ত্রয়োদশ শতক এবং একুশ শতক; এই তিনটি সময়কে একসাথে নিয়ে কী নিপুণ দক্ষতায় খেলেছেন লেখক! কখনও টিলার দূরত্ব ঘুচিয়ে মিশিয়েই দিয়েছেন সময়কালকে। এই মিশ্রণ আমার খুব ভালো লেগেছে। আর লক্ষণীয় ভাষায় ব্যবহার। কোন সময়ে ভাষা কেমন ছিল, সেটা নিয়ে লেখক যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে লেখাপড়া করেছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিন ধরনের ভাষারীতি তিন সময়ে কিরকম, সেইটা এই উপন্যাসে খুব মন দিয়ে পড়ে অভিভূত হয়েছি। এই বঙ্গদেশে বর্তমান সময়ে এসেও মনে হচ্ছে রাজপুত্র চন্দ্রগর্ভ আর কুন্তলা, লামা চাগ লোচাবা আর স্বয়ংবিদা, অমিতায়ুধ আর জাহ্নবী সবাই যেন একসূত্রে গাঁথা, কালচক্রে বিভিন্ন সময় এরা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে যেন ঘুরে ফিরে এসেছেন এবং পাঠকের কাছে এরা যেন কত আপন!
     সবটা পড়ার পরেও মাথার মধ্যে ঘুরতেই থাকে  ---


রিভিউটি লিখেছেনঃ Soumesh Pal

আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.

Popular Writers

Updates

{getWidget} $results={4} $label={recent} $type={list2}