review
অতিপ্রাকৃত কাহিনী
অভিশপ্ত রক্ত
আফজাল হোসেন (এল এল বি)
সেবা প্রকাশনী
বইটি কয়েকটি ছোটগল্পের সমাহার।
১)প্রায়শ্চিত্ত: শীতের রাতে বরাবরের মতনই সালিসি শেষে বাড়ি ফিরছেন নবাবপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন। তিনি জানতেন না,তার জীবনের বাঁক বদল ইতোমধ্যে লিখা শুরু হয়ে গেছে!
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পটা পড়ে অনেকটা মনে হলো,পাহাড় প্রমাণ কার্যনির্বাহীর গায়ে কুটোটিও ছোঁয়ালো না, যা করার সব চুনোপুঁটির সাথে। শুরু হলো এক ব্যাপার(cause) দিয়ে,সেটার কোনো প্রতিক্রিয়া(effect) না দিয়ে দেখানো হলো আরেক ইতিহাসের effect।
২)ঘুমবাড়ি: অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃষ্টির দিনে এজমা রোগী নিঃসন্তান রমিজ মিয়া বের হয়েছেন তার পাঁঠা খুঁজতে। এক তরুণীকে পেয়ে সন্তানের মমতায় লালন পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ে এলেন ঘরে। এরপর!?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: আগের গল্পের মতন অনেকটা একই ধাঁচে শুরু হলেও এই গল্পটা ভিন্ন। লেখকের লিখায় হুমায়ূন আহমেদের লিখার প্রভাব এত প্রবল যে, যে কোনো পাঠকের কাছে গল্পটা একদম খুব সহজেই অনুমেয় হয়ে উঠে। হয়তো অন্যভাবে ফুটিয়ে তুললে গল্পটা পাঠকমনে আরো প্রভাব বিস্তার করতে পারতো।গল্পটার প্লট খুব ভালো ছিলো,শুধু উপস্থাপন হুমায়ূনীয়ভাবে না করলেই হতো।
৩)কালো সিন্দুক: জরিনা প্রতি ভোরে নদীতে গোসল করতে গেলে একটা কালো সিন্দুক দেখতে পায়। কী আছে ওই সিন্দুকে!?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: উত্তর জানতে হলে গল্পটা আধেকও মনে হয় পড়তে হবে না। সেই আদিকালের টিপিক্যাল গল্প।
৪)শুকনো গোলাপ: সে বলেছিলো, শুকনো গোলাপ ভিজিয়ে রাখলেই তার দেখা পাবো। সত্য না মন ভোলানো কথা?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পটা যতটা না বেশি অতিপ্রাকৃত, তার থেকে বেশি প্রেমের। প্রেমের গল্প হিসেবেই গল্পটা মন ছুঁয়েছে বেশি।
৫)পিশাচবাড়ি: মামার বাড়ি বেড়াতে এসে আরামেই আছে অনিক। কিন্তু হুট করে কী এমন হলো যে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছে অনিক!?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: নাম দেখে আর প্রথম একটু পড়েই গল্পটা আশি শতাংশ বোঝা হয়ে যায়। তাও মাঝে একটা টুইস্ট দিয়ে অন্যদিকে নিতে গেলেও শেষে আরেকটা টুইস্ট দিতে গিয়ে গল্পটাকে আবার সেই চেনা রাস্তায় ফেরত আনা হয়েছে।
৬)মৃত্যু: রাহেলা ভুল দেখছেন নাতো? জ্বরাক্রান্ত রুনুর মাথার পাশে ওটা কিসের ছায়া!?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: টিপিক্যাল গল্প। শেষটা একদম শুরু থেকেই অনুমেয়।
৭)প্রেয়সী: রাজপুত্রের মত সুদর্শন রিফাতের রূপে মজেছে কলেজের সব মেয়েরাই। অথচ,এত সুযোগ পেয়েও রিফাত কোনো মেয়েকেই তার কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সব দেখেও সহজ সরল তিথি প্রেমে পড়ে গেলো রিফাতের।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: যদিও মোটামুটি চেনা ধাঁচের কাহিনী, কিন্তু একটু ভয়াবহ করার প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। কিছু প্লট পয়েন্ট ভালো লেগেছে, যদিও "সমাধান"টুকুর পিছনের লজিক(মানে এধরণের কাহিনী যতটুকু লজিক্যাল হয়,সেপ্রেক্ষিতে) বুজতে পারলাম না। শুধু পাঠকের ইমোশনাল সেন্টিমেন্ট ছোঁবার জন্য?
৮)দুঃস্বপ্ন: সেতু যে যে রাতে জহির ভাইকে স্বপ্নে দেখে,ঠিক পরের দিনই জহির তাদের বাসায় বেড়াতে আসে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: আরো একটু দীর্ঘ করে আরো কিছু শাখা প্রশাখা বিস্তার করে কাহিনীকে আরো বৈচিত্র্যময় করা যেত।
০৯)অপঘাত: হানিফ সাহেবকে কেউই পছন্দ করে না। না অফিসে, না বাসায়। তাই তার সমস্যার কথা সে বলতেও পারে না কাউকে। সমস্যা তেমন কিছু না। রাতে একা ঘুমালে মাংস পোড়ার সাথে আতর মিশ্রিত ধরণের ঝাঁঝালো গন্ধে ভরে ওঠে তার ঘর।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: এই গল্পে সবথেকে বেশি হুমায়ূনীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মনে হচ্ছিল "নিমধ্যমা" এর চরিত্র নাম পাল্টে হাজির। আর গল্পটা একদম অনুমেয়, অনেকটা উপদেশ বা রূপকথার গল্পের মতন এন্ডিং।
১০)কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ: রাতের বেলায় অল্প বয়সী মেয়ের বেওয়ারিশ লাশ কিনতে কেন এসেছে বজলু?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: একদম পুরো প্রেমের গল্পের মাঝে এক ছটাক হরর।
১১)অভিশপ্ত রক্ত: এক বৃদ্ধাকে ভয় পেয়ে রিকশা থেকে নেমে ছুটতে গিয়েই এক্সিডেন্টের কবলে পড়লো রুমা। কিন্তু সে জানে না, সবকিছুর শুরু আরো অনেক আগে থেকেই!
পাঠ প্রতিক্রিয়া: শুরু যেন কেমন। তাও গল্প মনে হচ্ছিল নিজের মতন দৌড়াচ্ছে,দৌড়াচ্ছে,দৌড়াচ্ছে। শেষ দিকে আসল কাহিনী প্রকাশ। তবে, এই গল্পের সবথেকে শক্তিশালী জায়গা হলো গল্পের শেষাংশ। শেষাংশটুকুই প্রকৃত হররের স্বাদ দিয়েছে। পুরো গল্প নয়,শুধু শেষাংশের জন্য বলতে পারি,এই গল্পে আমি তৃপ্ত।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Uchchhash
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।