উদ্ভব লিঙ্গ
লেখক:সৌরভ চক্রবর্তী
ঘরানা:তন্ত্র-মন্ত্র, ভৌতিক(অকাল্ট হরর)
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৮৬
হার্ডকভার
প্রচ্ছদ: অনিকেত মিত্র
ছবি: কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
.............................................................................
কিছু কিছু কাহিনিতে বোধহয় শয়তান জিতে যায়!
এই কাহিনির শুরু স্বাধীনতার পূর্ববর্তী অবিভক্ত বাংলায়। এই কাহিনির বিস্তার এক মর্গে। এই কাহিনি শেষ হচ্ছে এক তীর্থে। কাহিনিটিকে জুড়ে রেখেছে এক রোমহর্ক যাত্রা।
সাধক পবন কুমার এক অদ্ভুত চরিত্র। সে একাধারে সাধক ও চিত্রশিল্পী। আবার এই পবন কুমারই হাসপাতালের মর্গ রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। হাসপাতালের মৃত লাশের সঙ্গে অদ্ভুত সম্পর্ক এই পবন কুমারের। কী করে সে হাসপাতালের লাশেদের সঙ্গে?
অন্যদিকে বর্তমান যুগের কর্পোরেট জগতের কিছু ছেলেমেয়ে বাংলার সেই গ্রামে উপস্থিত হয়ে জড়িয়ে পড়েছে এক অভিশপ্ত অধ্যায়ের সঙ্গে। অভিশপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে পবন কুমারের সম্পর্কটা ঠিক কী? এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটানোর অদম্য ইচ্ছে নিয়ে তাদের উদ্ভব লিঙ্গ অভিযান। কী হয় উদ্ভব লিঙ্গে? কী এই উদ্ভব লিঙ্গ?
এক গর্ভবতীর তার সন্তানের জন্য লড়াইয়ের কাহিনি এই উদ্ভব লিঙ্গ, এক মনস্তাত্ত্বিকের অদ্ভুত উন্মাদ চিন্তাভাবনার কাহিনি এই উদ্ভব লিঙ্গ, বন্ধুত্বের কাহিনি এই উদ্ভব লিঙ্গ, নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করার কাহিনি উদ্ভব লিঙ্গ।
সর্বোপরি এক ঐন্দ্রজালিকের কাহিনি এই উদ্ভব লিঙ্গ। ইন্দ্রজাল বিদ্যার আঁতুড়ঘর এই গ্রন্থ। সমস্ত সটীক ইন্দ্রজাল বিদ্যার প্রয়োগের বর্ণনা রয়েছে এই গ্রন্থে।
গ্রন্থ শেষে পাঠকের মন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে - ভয়ের জাগরণ হবে নাকি ভক্তির, সে উত্তর নটেগাছটি মুড়োলেই পাওয়া যাবে।
............................................................................
(কিছু #স্পয়লার আছে)
মূল কাহিনীর শুরু বন্ধুদের হ্যাঙআউট নিয়ে। সেখানে এক পবন কুমারের অসমাপ্ত কাহিনী শুনে এসে সবার অবস্থা তথৈবচ। এরপর বাকি কাহিনী শোনার অদম্য আকাঙ্খা। এরপরই প্রথম টুইস্ট, কাহিনীটা শুধু কোনো গল্প নয়, বরং কথকদ্বয়ের পূর্বপুরুষদের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং অভিশাপ। তখনই জানা যায়,কাহিনীর সূত্রপাত বহুকাল আগে। পরিণতি কী হবে,সেটা পুরোপুরি না অনুধাবন করতে পেরেই জড়িয়ে যায় সবাই। পারবে তো ফিরতে স্বাভাবিক জীবনে?স্বাভাবিক জীবন তো দূর,জীবন নিয়েই কি ফিরতে পারবে??
এই গল্পের একজনই নায়ক। পবন কুমার। সেই পুরো গল্প নিয়ন্ত্রণ করেছে, প্রতিটা খুঁটিনাটি তার জানা, অন্য চরিত্রদের সে একদম নিজের আঙুলে নাচিয়ে ছেড়েছে। এই মনে হচ্ছে, ওরা নিজের ইচ্ছেতে করছে, কিন্তু পরিশেষে দেখা যায়, ওরা তাই করে, পবন কুমার যা চায়। পবন কুমার চরিত্রটাকে ভয়ও লাগবে আবার তার জন্য সম্ভ্রমও বোধ হবে। এবসুলেট ব্ল্যাক বা এবসুলেট হোয়াইট, কোনোদিকেই তাকে ফেলা যায় না, সে একদম গ্রে পজিশনে নিজেকে বসিয়ে রেখেছে।
শেষের ষড়রিপুর সাথের যুদ্ধ বা পরীক্ষাই মনে হয় ওই বইয়ের সবথেকে ভয়ঙ্কর অধ্যায়। এইসময় নিজেকে নিয়েই প্রশ্ন জাগে, এই ভোগী জীবনে অভ্যস্ত আমিই কি পার হতে পারতাম সবগুলো স্তর?
পুরো গল্পটা শেষে আবার নতুন গল্পের জন্য জায়গা রেখে দেয়া। পুরোটা পড়ে এসে এই জায়গায় একটু খারাপ লেগেছে যে, এতক্ষণ ধরে শেষ বা আল্টিমেট ফিনিশ দেখার ইচ্ছে বা আকাঙ্খা, সেখানে বলতে গেলে কিছুই পূরণ হলো না। সব গল্পকেই কেন ধারাবাহিক বানাতে হবে,সিক্যুয়েল কেন বানাতে হবে? আজকাল কি ওয়ান-শট স্টোরির জনপ্রিয়তা কমে গেছে? সব কিছু নিয়েই ইউনিভার্স বানাতে হবে?
অনিকেত মিত্রের প্রচ্ছদ ছিলো দৃষ্টিনন্দন আর পাতায় পাতায় কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলের আঁকা ছবিগুলো ছিলো চমৎকার।
পুরো বইয়ের মধ্যে সবথেকে ভালো লাগা লাইন।এই এক লাইন যেন পুরো পবন কুমারের চরিত্র ফুটিয়ে তোলে।
"যারা সাধনায় ঈশ্বর বা শয়তান কোনোটাই হয়না তারা শিল্পী হয়ে যায়!"
রিভিউটি লিখেছেনঃ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।