Get PDF go here PDF Books Contact Us

বিশ্বাসঘাতক - নারায়ণ সান্যাল Biswasghatak by Narayan Sanyal

বিশ্বাসঘাতক - নারায়ণ সান্যাল Biswasghatak by Narayan Sanyal
boibd
বই - বিশ্বাসঘাতক
লেখক - নারায়ণ সান্যাল
পাঠপ্রতিক্রিয়া - রাহুল 
ব্যাক্তিগত রেটিং - 8.5/10


"নভঃস্পৃশং দীপ্তমনেকবর্ণং
ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম্। 
দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রব্যথিতান্তরাত্মা 
ধৃতিং ন বিন্দামি শমং চ বিষ্ণো।" -

ঠিক এই শ্লোকটিই নাকি আওড়ে ছিলেন পরমানু বিজ্ঞানের জনক ওপেনহাইমার। সিনেমাটা এসে বইটা পড়তে বাধ্য করলো। সিনেমাটা আসার আগেও আমি বহুবার বহুপাঠকের কাছে শুনেছি, যে নারয়ণ সান্যালের বিশ্বাসঘাতকটা পড়ুন। হাইলি রেকমেন্ড একটি বই ছিলো। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম পড়ব পড়ব অবশেষে এই শেষ তিনদিনে নানান অবসর সময়ে বইটা শেষ করলাম। 

এক কথাও অসাধারণ বই। পরমানু বলতে সাধারণভাবে ওই ইলেকট্রন প্রোটন আর নিউট্রন এটুকু মাত্র জ্ঞান নিয়ে ভয় হচ্ছিল যে এ বই আদৌ বুঝতে পারব কিনা, কিন্ত সে সংশয় লেখক দূর করেছেন, অত্যন্ত সহজ সাবলীল ভাষায় (কোথাও ছবির সাহায্যে) সমস্ত দূর্বোধ্য বিষয়কে তরলীকরণ করেছেন তিনি। কি এই পরমাণু বিষ্ফোরণ, কীভাবে বিজ্ঞানের মাথায় এলো এই বোমের ধারণা এই সকল প্রশ্ন নিয়েই এই বইয়ের শুরু। লেখক পরমানু বোমার জন্মলগ্ন থেকে আমাদের পরমানু বিষ্ফোরণ পর্যন্ত একটি জার্নি করিয়েছেন। প্রতিটি ধাপে হাত ধরে বুঝিয়েছেন - দেখো, এভাবে রাদ্যার্ফোর্ড পরমানুর বিভাজন ঘটালেন, এভাবে ইলেকট্রন আবিষ্কার হলো, এভাবে নিউট্রন। আমি এতো সুন্দর বাংলায় বিজ্ঞান মূলক লেখা পড়িনি। আমি লেখকের লেখনীকে স্যালুট করছি। তবে এ বই শুধু মাত্র পরমানু বোমার ইতিহাসকাহিনী নয়। তার থেকেও অনেক বেশি কিছু পেয়েছি এই বইয়ে। এই বইয়ের চরিত্ররা, প্রায় ২৪জন নোবেল প্রাপক বিজ্ঞানী উপস্থিত এই বইয়ে। তাদের জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরেেছন লেখক। জার্মিনি গেটিজেন ইউনির্ভার্সিটির কথা আমি অদ্ভূত ভাবে গিলেছি যেন। কল্পনা করতে পারছিলাম যে এত মহৎ মানুষরা সকলে মিলে একসাথে কাজ করেছেন। একসাথে আলোচনা করেছেন, একে অপরের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সেই যুগেও। 
রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে বিজ্ঞানীরা দেশ ত্যাগ সহ্য করেছেন কিন্ত বিজ্ঞানকে ছাড়েননি। 
প্রথম পরমানু বোমা বানায় আমেরিকা, তাদের প্রকল্পের নাম ছিলো ম্যানহাটন প্রকল্প এই প্রকল্পের শুরুটা বেশ অদ্ভূত। কেন বোমা বানাতে হবে, কারণ তারা ভাবছে যে হিটলার বুঝি জার্মান বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিয়ে আগেই বোমা বানিয়ে ফেলবে। কিন্ত হিটলার যে কতটা মূর্খ ছিলো তা জানা যায় আরোও পরে। তাই জার্মানিকে কাগুজে বাঘ বলে তুলনা করেছেন তিনি। এই কাগুজে বাঘের ভয়েই কিন্ত তৈরী হয়েছিলো পারমানবিক বোমা। তা কে করল এই কাজ জানেন, বিশ্ববরেন্য সকল বিজ্ঞানীরা। আমেরিকা প্রথম পারমানবিক বোমা তৈরী করলেও তাতে যুক্ত ছিলেন হাত গোণা কয়েক জন মাত্র আমেরকিান বৈজ্ঞানিক। বেশিরভাগই ছিলেন জার্মান, ইতালিয়ন, বা ফরাসি, ইংল্যাণ্ডের বা বৈজ্ঞানিকরা। ভাবতে অদ্ভূত লাগে যে তারা নিজের দেশ থেকে বিতারিত হয়ে আমেরিকায় গিয়ে আমেরিকার জন্য় বোমা বানালেন। এবং পারমানবিক বোমা বানানোর শ্রেয় পেলেন ওপেনহাইমার (ওপি) তাকে ঘিরেই এই উন্মাদনা। এসবের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক কোথায়, তাই না। আসলে বিশ্বাসঘাতকতাটা কি আদৌ বিশ্বাসঘাতকতা এই নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। ম্যানহাটন প্রকল্পের যে সাফল্যামৃত তা তুলে নিয়ে গিয়ে যদি কোনও ব্যাক্তিকে তৎকালীন রাশিয়ায় পাচার করে দেয়, তাহলে। 
হ্যাঁ এটাই হয়েছিলো। এই কাহিনী সেই ঘটনাকে ঘিরেই। তার কাহিনী বলতে গিয়েই লেখক পরমানুবোমার জন্মবৃত্তান্ত থেকে পরিণতি পর্যন্ত দেখিয়েছেন। আর বলেছেন সেই বিশ্বাসঘাতকের কথায়। 
তবে আমার মতে বিশ্বাসঘাতক তিনি ছিলেন না। তার বদন্য়তাতেই সেই সময় হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বিশ্ব। লেখক নিজে স্বীকার করেছেন যে বিশ্বাসঘাতকের সাহায্যেই রাশিয়া অন্তত দুবছর আগে বানাতে পেরেছে পারমানবিক বোমা। তাই তিনি বিশ্বাসঘাতক এ আমি মানি না। 
এই বইয়ে আমরা তৎকালীন রাশিয়া জার্মানি ও আমেরিকার কথাও পাবো। আর সর্বশেষে পাবো এক করুণ প্রেমকাহিনী। 
এ বই আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এবং সকলকে রেকমণ্ড করবো পড়ার জন্য।

রিভিউটি লিখেছেনঃ রাহুল
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে

Book name : বিশ্বাসঘাতক
Author name: নারায়ণ সান্যাল 
বিষয়বস্তুর ব্যাপকতায় নারায়ণ সান্যাল বর্তমানে বাঙলা সাহিত্যে অদ্বিতীয়। মার্কিন সরকারের অতন্দ্র প্রহরা ভেদ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জনৈক বৈজ্ঞানিক একক প্রচেষ্টায় একটি গোপন তথ্য রাশিয়ায় পাচার করেন। মানব-সভ্যতার ইতিহাসে আর্থিক মূল্যমানের দিক থেকে
এটাই নাকি সবচেয়ে বড় জাতের বিশ্বাসঘাতকতা। ‘কী, কেন ; কীভাবে ও কে?’ সেটাই ‘বিশ্বাসঘাতক'-এর মূল | পারমাণবিক বোমা। কে না শুনেছে এই নাম! কিন্তু কি আছে এই বোমাতে? কেনই বা এটা এতটা বিধ্বংসী? যুক্তরাষ্ট্র এটার জন্য এতটা মরিয়া কেন, যুক্তরাষ্ট্র যদিও বা এই বিধ্বংসী বোমা বানাতে সক্ষম হলো কিন্তু রাশিয়া কিভাবে পেল এই বোমা; বোমা বানানোর ফর্মুলা? হু ইজ দ্য ট্রেইটর!? বিশ্বাসঘাতকটা কে?

পুরো বই জুড়েই ওই একটা প্রশ্ন। 'হু ইজ দ্য ট্রেইটর? বিশ্বাসঘাতকটা কে?' এবং ওই বিশ্বাসঘাতককে খুঁজতে, বিশ্বাসঘাতকের প্রকৃতি বুঝতে লেখক আমাদের পরিচয় করান বিশ্ববিশ্রুত সব বৈজ্ঞানিকদের। তাঁদের কর্মকাণ্ড, গবেষণার সাথে। পারমাণবিক বোমা কী? কিভাবে বানিয়েছে এটা। সূচনালগ্ন থেকে পরিণতি পর্যন্ত বিশদ বর্ণনা করেছেন সহজভাবে | তিনি একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলেন পরমাণুর ইতিহাস। ওখানে স্থান পেয়েছে পরমাণু নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন পদার্থবিদ, রসায়নবিদদের প্রস্তাবনা, ব্যাখ্যা, থিওরী। গল্পের খাতিরে রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেল নিয়ে এসেছেন, এসেছেন নীলস বোর, চ্যাডউইক, এনরিকো ফের্মি, ওপেনহাইমার, ৎজিলার্ড, কুরি দম্পতি, সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনসহ আরো অনেক প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। ধাপে ধাপে আমরা জানতে পেরেছি কে কিভাবে সজ্ঞানে-অজ্ঞানে জড়িয়ে গিয়েছে এই পারমানবিক বোমার সাথে। আমেরিকার ছলচাতুরী আর প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের আত্মঅহমিকার স্বরুপও দেখতে পেয়েছি আমরা। দেখতে পেয়েছি সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের প্রেসিডেন্টের প্রতি পারমানবিক বোমা নিয়ে গবেষণা করার অনুরোধের চিঠি। আবার সেই আইনস্টাইনকেই দেখেছি পারমানবিক বোমার ভয়াবহতা অনুধাবন করে সেই বোমা ব্যবহার না করার অনুরোধ নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেরিত চিঠি। এই দলে ছিলো ৎজিলার্ডসহ আরো অনেক বিজ্ঞানী। কিন্তু যার পেছনে এত টাকা গেলো সেই পারমানবিক বোমার কাছে এই আইনস্টাইন, ৎজিলার্ড বড় তুচ্ছ। অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছিলো হেনরি ট্রুম্যানের কাছে। আর তার ফলস্বরুপ হিরোশিমা আর নাগাসাকির ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছিলো তা দেখতে পেলো সারা বিশ্ববাসী। এই বইতে একটা রুদ্ধশ্বাস এবং সেই সাথে অত্যন্ত করুণ একটা 'প্রেম-কাহিনী' ও পাবেন। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর জনপ্রিয় যেকোনো থ্রিলারকে হার মানিয়ে দিতে প্রস্তুত এই বই।

রিভিউটি লিখেছেনঃ অনন্য ভট্টাচায

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.

Popular Writers

Updates

{getWidget} $results={4} $label={recent} $type={list2}