দেবতার চাবি
লেখকের নাম — হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
বিষয় — কল্পবিজ্ঞাননির্ভর ছোটগল্প
নুবিয়ান মরুভূমিতে এক ভূতাত্বিক মুথাইয়া শ্রীনিবাসনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক এই গল্প। মিশরীয় সভ্যতার উৎস লগ্নে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল অনেকগুলি পিরামিড। আরো বহু প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে ছিল বনভূমি জল-জঙ্গল বহু প্রাণীর অবস্থান। তারপরে ভূতাত্বিক নিয়মে প্রকৃতির রূপ বদল ঘটেছে। হাজার হাজার বছরের এই পরিবর্তনের ফল আজ সেখানে রুক্ষ মরুপ্রান্তর আর কিছু কাঁটাঝোপ মাত্র। আর এরই মাঝখানে রয়েছে অনেকগুলি পিরামিড, যার জন্য এ অঞ্চলের স্থানীয় নাম মৃতের নগরী। এখানেই ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের চিহ্ন নিয়ে কাজ করতে নমুনা সংগ্রাহক শ্রীনিবাসনের আগমন। কিন্তু যে মৃত ভূমিতে আফ্রিকার কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্থানীয় মানুষেরা সহজে আসতে চায় না সেখানে আগত মজুররা কয়েক দিন বাদে রাতারাতি কাজ ছেড়ে চলে যায়। এক রাতে উল্কাপাত এবং পর দিনে খননের সময় সামান্য দুর্ঘটনায় মজুররা ভয় পায়। স্থানীয় ওঝার কাছ থেকে অভিশাপ কাটানোর তাবিজ নিয়ে তারা ফিরে আসবে। ভূতাত্ত্বিককে অতএব একটি দিন মাইল মাইল বিস্তৃত মরুপ্রান্তরে একলা কাটাতে হয়। সেদিন তাঁর আলাপ হয় এমনই এক পিরামিডের কাছে ঘুরে বেড়ানো একলা দীর্ঘদেহী আলখাল্লা পরিহিত মানুষের সঙ্গে, যার নাম টি রেক্স। আলাপচারিতা জমে উঠতে শ্রীনিবাসন আবিষ্কার করেন মানুষটির মহাকাশ সম্পর্কে এমনকি পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলির সম্পর্কে বিপুল প্রাজ্ঞতা, বিশেষত সেই সভ্যতাগুলি যাদের প্রাচীন কালেই বিপুল উন্নতি আজও মানুষের কাছে বিস্ময়ের কারণ। সেখানেই একটি পিরামিড, যা দেবতার কবর নামে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত, যার ত্রিকোণ চূড়াটি আশ্চর্য স্বচ্ছ, তার রহস্য প্রকাশ পায়। সে মানুষটি খুঁজতে এসেছে একটি বিশেষ বস্তু। ঘটনাচক্রে সেটি পাওয়া যায় শ্রীনিবাসনের কাছে । সংগৃহীত প্রস্তরের মধ্যে অজানা এক পাথরে তৈরি খাঁজকাটা চাবিটি পাওয়ার সূত্রে আগন্তুকের সঙ্গী হয় শ্রীনিবাসন। এরপর সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়। অজানা পিরামিডের স্বচ্ছ চূড়ায় ৫ হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত গোপন বাক্সের সামনে তারা হাজির হয়। যে হিমায়িত বাক্স খোলা যায় ওই দেবতার চাবি দিয়ে। বাক্সের ডালা উন্মোচনের পর সমাধান হয় সেই আশ্চর্য সত্যের যে সত্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে মিশরের পিরামিড, ইনকা সভ্যতার প্রযুক্তি, মেক্সিকোর মন্দির স্থাপত্য, মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার, ভারতবর্ষের মরচে মুক্ত লৌহস্তম্ভের।
মানব সভ্যতার বিবর্তনের পথে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে প্রাচীন এবং উন্নত সভ্যতাগুলির অনেক সৃষ্টির আধুনিকতা আজও পৃথিবীর মানুষের কাছে রহস্যময়। আর সেই রহস্য নিয়ে গড়ে ওঠা কল্পবিজ্ঞান, যেখানে সোনালী ডানার পরীর মতো রূপকথাতুল্য কিছু মানুষ বা মনুষ্য আকৃতির চরিত্র, যারা এক প্রাচীন সভ্যতাকে যথার্থ রূপকথার পর্বে মাঝে মাঝে পৌঁছে দিতে চেয়েছে। সেই দেবতুল্য চরিত্রদের কি সাক্ষাৎ মিললো, শ্রীনিবাসনের সেই অভিজ্ঞতা, মানুষের অনেক প্রাচীন কীর্তিজাত বিস্ময় আর লেখকের কল্পনা এখানে মিলেমিশে একাকার।
এই গল্পের অন্তরালে যে বিশ্বাস অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে বহির্জগতের অজানা সভ্য চরিত্রদের হস্তক্ষেপ আছে, সে বিশ্বাসেরই পুনরুচ্চারণ এখানে রয়েছে। গল্প বিষয় তাই অভিনব নয়। কিন্তু পাঠ্য হিসেবে চমৎকার। কারণ দুনিয়ার রহস্য নিয়ে রূপকথা গড়তে পাঠক পছন্দ করে। বাইরের পৃথিবীতে তাদের মতো সভ্য জগতের অস্তিত্ব নিয়ে পাঠকের সেই বিশ্বাসেরই প্রতিধ্বনি এখানে মেলে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Nirmalya
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।