বই: রহস্যময় শিব
লেখক: সুব্রত সান্যাল
প্রকাশক: নিউ ভারত সাহিত্য কুটির
পৃষ্ঠা: ১৭৪
কলেজ স্ট্রীটের লাইব্রেরিত আমার পছন্দের জনরা শুনে বুকশপের মালিক এই বইটি বের করে দিয়েছিলো। ২০ সেকেন্ডে চোখ বুলিয়েই বুঝেছিলাম এই বইটা গতানুগতিক ধারার বাইরের হতে পারে। ১৭৬ পৃষ্ঠার একটা বই ৪০০ রুপিজ শুনে একটু দমে গিয়েছিলাম। কিন্তু দোকানদার দাদা ভরসা দিয়েছিলেন যে সবকিছু দাম দিয়ে মাপা ঠিক না। ধন্যবাদ দাদা আপনার অসাধারন একটা সাজেশনের জন্য।
সাধারনত ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষজন আমরা খুবই আবেগপ্রবন। গল্পের গরু গাছে চরলে আমাদের তেমন সমস্যা নাই। কিন্তু সেখানে যদি দেব-দেবতা থাকে তাহলে গাছে কেনো আকাশে উড়লেও আমরা নমো নমো করে মাটিতে একটা ঢিপ দিয়ে দেই। সেখানে মহাদেব শিবকে একটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করার সহজসাধ্য ঘটনা নয়।
শিব যার নামের অর্থ সুন্দর। সে কখনো ভয়ংকর আবার পরক্ষণে সে সুন্দর। কখনো সে শ্মশানবাসী আবার সে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘরকন্না করছে। কখনো সে নৃত্যকলায় পারদর্শী আবার কখনো যুদ্ধবিদ্যা, ভেষজবিদ্যা, তন্ত্রবিদ্যা, বা চার বেদের স্রষ্টা। তাকে বুঝার সাধ্য আছে কার? যেখানে ব্রক্ষ্মা বিষ্ণু তার আদি-অন্ত পেতে ব্যার্থ সেখানে সাধারন মানুষের কি সামর্থ্য তাকে বুঝতে পারার। সে ধ্বংশের দেবতা কিন্তু সে শান্ত সোম্য আর ভক্তের পরম কাছের ভোলানাথ।
একজন দেবতার এত বৈচিত্র আর সনাতন সাহিত্যে পাওয়া যায়না। ধর্মীয় ভক্তিবাদের বাইরে থেকে যদি দেখা যায়, বেদ পুর্ববর্তী সময়ের এক যুদ্ধবাজ নেতা থেকে কখনোবা একজন আদিবাসী শ্যামনের ছায়ায় তাকে খুজে পাওয়া যায়। বৈদিক যুগের আর্যদের ধর্মে যেখানে দ্রাবিড়দের প্রবেশাধিকার ছিলোনা সেখানে একজন অবৈদিক ধীরে ধীরে রুদ্র রুপে বেদে প্রবেশ করে সেই ভয়ঙ্কর রুপের রুদ্রের থেকে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন শান্ত শিষ্ট শিব। পৌরাণিক যুগে যখন বৈদিক দেবতাদের যখন ধীরে ধীরে অবলুপ্তি ঘটছে তখনো শিব আপন মহিমায় ব্রক্ষ্মা-বিষ্ণুর সমকক্ষ থেকে আরো উপরে উঠে মহাদেব হয়ে উঠলেন। কখনো দারুবনে, কখনো দক্ষযজ্ঞে, আবার কখনো হলাহল পানে, কখনোবা ভক্তের আর্তিতে নিরাকার থেকে আকার ধারন করে যমের সাথে সংঘাত করা বা কখনো গঙ্গা/নেত্রা নদী প্রবাহিত করা। কোথায় নেই তিনি? মনশা, চন্ডী, সতী, পার্বতী, গণেশ, কার্তিক, দুর্গা, কালী সবকিছুর সাথে জড়িত থেকেও তিনি নির্বিকার ধ্যানে বসা মহেশ্বর। তিনি সবকিছুতে আছেন আবার তিনি সবকিছুর বাইরে। এক ভীষণ রহস্যময় চরিত্র মহাদেব শিব।
শিব এক মহাপ্লাবন । দিনে দিনে সে যে পথে চলেছে সেই পথের অন্যান্য দেবতারা ধীরে ধীরে তার মাঝে বিলীন হয়ে গিয়েছে। কত শত লৌকিক দেবতা ধীরে ধীরে শিবনামে বা তার পুত্র/কন্যা হয়ে এখনো পূজা পাচ্ছে তার ইয়ত্তা নাই। কিন্তু শিব নির্বিকার, কখনো তিনি ভোলানাথ ব কখনো রুদ্র, কখনো তিনি ঈশান, সদ্যোজাত, বামদেব বা অঘোর আবার তিনিই নটরাজ। একই অঙ্গে কতো যে রুপ তার কোন শেষ নাই।
ভক্তের ভগবান তিনি যাকে সামান্য জল ফুলে সন্তুষ্ট করা যায়। যাবত ধর্মীয় জ্ঞান বেদ, তন্ত্র, আগম, নিগম, চিকিৎসাশাস্ত্র, নৃত্যকলা, কৃষিবিদ্যা, যোগ কোথায় নেই তিনি। সনাতন ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে শিব নাম ব্যাতীত কখনো শেষ করা যাবেনা। কত শত তত্ত্বের মাঝে কোথায় যে তিনি কীভাবে আছেন আমরা সাধারন মানুষ তার কতটুকুই বা বুঝতে সক্ষম?
রিভিউটি লিখেছেনঃ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।