কর্ণসুবর্নের কড়ি
লেখক : হিমাদ্রিকিশর দাশগুপ্ত
পত্রভারতী প্রকাশনী
৬ টি প্রপ্তমনস্ক ইতিহাসভিত্তিক কাহিনী
লেখকের অন্যান্য ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস র মত এটিও একটি মনোমুগ্ধকর উপন্যাস। যার মধ্যে রয়েছে ৬ টি পৌরাণিক প্রেক্ষাপটে রচিত কাহিনী যা কিছুটা সত্য আবার কিছুটা কল্পনা। আমরা যেসকল ঐতিহাসিক ঘটনা শুনে এসেছি তার সমান্তরাল চলা এমন অনেক ছোট ছোট অজানা অচেনা গল্পঃ কে তুলে ধরা হইছে। বস্তুত বলতে গেলে প্রধান কাহিনীর মহীরুহের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সেই ছোট ছোট গুল্ম ঘটনা কে সফলতার সঙ্গে নিজের লেখনীতে তুলে ধরেছেন লেখক।
বীর্যবান, রম্ভা, প্রস্তর ঘাতক, বিল্ববতি, মালিনী মঞ্জরী এবং কর্নসুবর্নের কড়ি এই ছয়টি কাহিনী নিয়ে রচিত এই পুস্তক।
বীর্যবান: এখানে বর্ণিত হইছে রাজা লক্ষণ সেনের তুর্কি আক্রমণে পালিয়ে যাবার পর তার প্রাসাদের শোভাবর্ধন কারিনী ইরাবতী, তার প্রেমিক চিত্রসেন এবং অভিমন্যুর কাহিনী যা দেখাবে প্রকৃত ভালোবাসা কি এবং তার জন্য মানুষ কি কি করতে পারে ।
রম্ভা : এখানে কথিত হইছে শ্রীনগর রাজ চক্র বর্মণের চূড়ান্ত লাম্পট্যের কাহিনী তার ফলে তার রাজ্যের অবনতির কথা আর কিভাবে তার দুষ্কর্মের শাস্তি দেন অন্য এক মহান রাজা যার স্ত্রী স্বয়ং দুশ্চরিত্র রাজার অত্যাচারের শিকার।
প্রস্তর ঘাতক : খাজুরাহর প্রেক্ষাপটে রচিত এই কাহিনী বর্তমান এবং অতীত এর মেলবন্ধন ঘটায়। পাঠকদের সামনে তুলে ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দী অপেক্ষারত এক কর্তব্যপরাওনা নারীর প্রতীক্ষার অবসানের কাহিনী।
বিলববতি: এই কাহিনী আমাদের পৌঁছে দেবে একেবারে মেবার রানা উদয় সিংয়ের কুম্ভ গড়ের অন্দরে। মোঘল সম্রাট আকবরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে দুই মহীয়সী নারীর লড়াইয়ের ঘটনা এবং তাদের চরম পরিণতির কথা তুলে ধরা হইছে এখানে।
মালিনী মঞ্জরী: এক অসমাপ্ত প্রেমের করুন কাহিনী , রাজ প্রাসাদের সামান্য দাসী আর কর্মকারের এক অপূর্ণ ভালোবাসার ইতিহাস।
কর্ণসুবর্নর কড়ি: জুয়া খেলা কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই কাহিনী তিনজন মানুষের জীবনের ওঠা পড়া আর অন্তিমে লোভ, কাম, মহ, মাৎসর্যে ডুবে গিয়ে তাদের অন্তিম পরিণতির কথা বর্ণনা করে।
কাহিনী খুবই সুন্দর যাহ পাঠক মন জয় করতে বাধ্য। তবু কোথায় মনে হইছে লেখকের আগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত কাহিনী গুলির তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ (সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত)। বানান ভুল বা লেখনীর ভুল থাকলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
#review
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক, অনুবাদক রবিন জামান খানের লেখনির সাথে প্রথম পরিচয় হয় ওনার অনূদিত রেমন্ড খাওরির লেখা "দ্যা লাস্ট টেম্পেলার" বইটির মাধ্যমে,বেশ সহজবোধ্য ঝড়ঝড়ে অনুবাদ ছিলো। একটানা পড়ে গেছিলাম তখন। তারপর এখন পড়লাম ওনার লেখা প্রথম মৌলিক থ্রিলার "২৫ শে মার্চ"। এই বইটি ওনার প্রথম মৌলিক থ্রিলার,কিন্তু পড়লে তা মনে হয়না,মনে হয় বেশ প্রফেশনাল। লেখক বেশ সিদ্ধ হস্তে এই থ্রিলারটি লিখেছেন। "দ্যা লাস্ট টেম্পেলার" কিংবা ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের প্যাটার্নের সাথে এই বইয়ের প্যাটার্নের বেশ মিল আছে। হয়তো প্রত্যেক ঐতিহাসিক কাহিনী নির্ভর থ্রিলারের কাহিনী বিন্যাসের প্যাটার্ন এক রকমই হয়।
পারফেক্ট থ্রিলার বলতে আমরা যা বুঝি "২৫ শে মার্চ" একদম তা। কিছু কিছু বাড়তি অনর্থক বর্ননা এসেছে বটে কিন্তু তাতে থ্রিলার রস আস্বাদনের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। একটা পারফেক্ট থ্রিলারে যে জিনিস গুলো থাকা প্রয়োজন তা বেশ পরিমিত পরিমাণেই ছিলো এই বইয়ে। বই এর প্যাটার্নটা এমন ভাবে তৈরী যে পাঠককে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখবে বইয়ের ভিতর। পাঠক চরিত্রগুলোর সাথে সাথে ঢাকার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াবে ক্লান্তিহীন ভাবে।
এক পা ভাঙা ঘোড়ার ছবি,এক অদ্ভুত দর্শন কয়েন,একটি ছেড়া ডায়েরি আর একটি বাক্য " ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইন ফ্রন্ট অফ ইউ" এই নিয়েই মূলত পুরো বইয়ের গল্প আবর্তিত হয়েছে।
তিনটি ভিন্ন সময়ের কাহিনী, ১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের গনহত্যা আর ২০১৪ এর একটি সময়। তিনটি বিচ্ছিন্ন সময় কিন্তু কাহিনী একই সূত্রে গাথা। ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ আর ২০১৪ এর সময়টি বইয়ে চলেছে পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে।
ভারতবর্ষের বুকে বিভিন্ন সময়েই নানা রকম গোপন সংঘের অস্তিত্ব ছিলো এবং অনেকের ধারনা মতে কিছু কিছু গোপন সংগঠন যাদেরকে কাল্ট বলা হয় তাদের অস্তিত্ব নাকি এখনো বিদ্যমান। এরকমই এক কাল্টকে নিয়েই এই বইয়ের মূল কাহিনী। কাল্টের সদস্য সংখ্যা থাকে সীমিত এবং এদের কার্যক্রমও খুব গোপনীয়তার সাথে করা হয়। বইয়ে বর্নিত কাল্টটি সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকে মোঘল সাম্রাজ্যের লুকিয়ে রাখা সম্পদের বিশাল একটা অংশের ঠিকানা খুব গোপনে ধারণ করে রাখে। কিন্তু ১৯৭১ এ এক বিশ্বাসঘাতক এই কাল্টের কথা বাইরে কিছু লোককে জানিয়ে দেয় এবং তখন থেকেই এই সম্পদ উদ্ধারের জন্য বারবার লোভীদের চোখ পড়ে এই কাল্টের উপর।
এই বইয়ে অতীত আর বর্তমান সময় এগিয়েছে পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে।ধাঁধা,গোপন কাল্ট,একটা সূত্র থেকে আরেকটা সূত্রে জাম্পিং, অরনি আর হাসানের পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে পুরনো ঢাকার অলিতে গলিতে সব সময় দৌড়ের উপর থাকা,ঢাকার টুকরো ইতিহাস, ২৫ শে মার্চ রাত্রের ভয়াল বর্ননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের বীরত্ব এবং সবশেষে একটার পর একটা সূত্র মিলিয়ে রহস্যের সমাধান,কিন্তু রহস্যের সমাধানের পরও একটা আপসোস থেকে যায়,কেন থেকে যায় সেটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
যাইহোক এই বইটি সব মিলিয়ে একটা পারফেক্ট প্যাকেজ।
অনেক দ্রুত গতির একটা বই, বেশ কয়েকটা টুইস্ট সম্বলিত,বিশেষ করে শেষের ভিলেনের টুইস্টটি সত্যিই অপ্রত্যাশিত।
বইয়ের কাহিনিবিন্যাসের গতি বেশ ঝড়ঝড়ে,প্রতিটি পৃষ্ঠা ছিলো উত্তেজনাকর,পাঠকের একটুও ক্লান্ত লাগবে না। কেউ একবার এই বইটি পড়তে নিলে শেষ না করে উঠতে পারবেনা।
রেটিং: ৯/১০
রিভিউটি লিখেছেনঃ Abdullah Tahsin
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।