কত কক্ষে কাগজ পোড়ে
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
অধুনা বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস আশ্রয়ী লেখায় নিঃসন্দেহে হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তর নাম অগ্রগণ্য। লেখকের লেখনী গুনে চরিত্রগুলি যেমন পূর্ণতা পায়, তেমনি তথ্যাভারাক্রান্ত হয় না লেখা। ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস,যেখানে পরিণতি অনেকক্ষেত্রেই জানা, তাসত্ত্বেও গল্পের সাসপেন্স বজায় থাকে।
কত কক্ষে কাগজ পোড়ে, এক নাতিদীর্ঘ উপন্যাস। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, তুর্কি আক্রমণ, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা। গল্পের শুরু হয় নালন্দার এক শান্ত, স্নিগ্ধ, শীতল সকাল দিয়ে। যেখানে সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়েছে তিন সুবিশাল গ্রন্থাগার এর গায়ে। রত্নদধি, রত্নরঞ্জক রত্নসাগর নালন্দার তিন রত্নভান্ডার। জ্ঞান সত্যই রত্ন। ধীরে ধীরে গল্পে আসে তুর্কি আনাগোনা, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশোধ স্পৃহা। সাথে এই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার রক্ষার এক অদম্য, অসম লড়াই। যার অন্যতম কান্ডারী হিসেবে থাকে রাহুলশ্রীভদ্র, শাক্যশ্রীভদ্র এবং কঙ্ক, এক বালক। ধীরে ধীরে এই বালক এর পরিচয় ও ক্রমশ প্রকাশ পেতে থাকে, উপসংহারে যে তার মূল ভূমিকা।
গল্পশেষের আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়তে থাকা তিন গ্রন্থাগার, কালো ধোঁয়ায় আবৃত আকাশ যেনো শুরুর স্নিগ্ধ নালন্দার সকালের এক অদ্ভুত contrast।
গল্পের একমুখিনতা লেখকের লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, কখনো খেই হারানোর ভয় থাকে না, একবার ধরলে শেষ করে উঠতে ইচ্ছে হয়। নিখুঁত লেখনী, নিখুঁত চরিত্র বিশ্লেষণ গল্প কে মনোগ্রাহী করে তোলে।
প্রসঙ্গত, কক্ষ শব্দের এক অন্য প্রয়োগ লেখক গল্পে দেখিয়েছেন, গল্পে কিভাবে কাজে লাগলো ঠিক বোঝা গেলো না, হয়তো কেবল তথ্য হিসেবেই দেখিয়েছেন লেখক।
গল্পের শেষে গভীর দুঃখে মনটা ভারী হয়ে যায়।
তবে, যে রক্তলোভী পাষণ্ড অমানুষটির ঘৃণ্য আগ্রাসনের ফল ওই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, জ্ঞানসমুদ্রের চরম অবমাননা―সেই ব্যক্তির শেষজীবন চরম হতাশাব্যঞ্জক। বালখিল্যযথা নির্বুদ্ধিতায় নিজের প্রায় সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে জলাঞ্জলি দিয়ে মৃত সৈনিকদের পরিবার কর্তৃক কটুক্তি, অভিশাপে জর্জরিত হয়ে দিশাহারা ক্লান্ত অসুস্থ বক্তিয়ার যখন নিদ্রিত তখন তার নিজের দলের লোকের হাতেই হয়েছিলো তার শিরশ্ছেদ।
কর্মফল একেই বলে!
রিভিউটি লিখেছেনঃ Sandip
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।