উপন্যাসের নাম- হাজার টাকার বউ
লেখিকা- অদিতি সরকার
রেটিং-৮/১০
এক বঙ্গালন মোলকি দুলহন লীলার জীবন নিয়ে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। মোলকি দুলহন কথাটির মানে হল মোল অর্থাৎ মূল্য দিয়ে কিনে আনা বৌ। এদেরকে 'পারো' বলেও ডাকে।ভারতবর্ষের পশ্চিম প্রদেশগুলোতে এই ঘৃণ্য প্রথাটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে হলেও এখনো চালু আছে। বাড়িতে প্রচুর পণ সাথে করে আনা বউ থাকা সত্ত্বেও অথবা বিয়ের জন্য সামর্থ না থাকলেও অথবা বাচ্চা পয়দা করার জন্যে আর সাথে অসীম জৈবিক চাহিদা আর ঘরের সব কাজ আর হাতের সুখ মেটানোর জন্য এদেরকে দশ-বিশ হাজার দিয়ে কিনে আনা হয়। বাংলা, ওড়িশা, বিহার বা উত্তরের রাজ্যগুলো থেকে কেনা হয় এদের।
মিথ্যে প্রেমের টোপে পড়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হেঁতালবেড়িয়া গ্রাম থেকে সুদূর হরিয়ানা হয়ে রাজস্থানে বারবার বিক্রি হতে থাকে এই গল্পটির মূল চরিত্র লীলা। সারাদিন ঘরের কাজ সাথে তপ্ত বালি পেরিয়ে মাথায় কলসি করে জল আনা আর রাত্রে তার আদমির আর মাঝেমাঝে ইয়ারদোস্তদের ভুখ মেটানো, এই হল হতভাগী লীলার জীবন। গল্পে আরো অনেক অভাগী মোলকিদের কাহিনী জানতে পারা যায়। কেউ তার সামান্য খাওয়াপরার দাবীর জন্য মালিকের ছেলেদের হাতে পুড়ে মরে। আরও একটা ঘৃণ্য প্রথা 'কড়েয়া'-র কথা জানতে পারা যায়।
গল্পের মাঝে হঠাৎ লীলার মালিক সুখবীর দূর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর কি হবে? লীলা কি আবার নরকে বিক্রি হয়ে যাবে নাকি তার জীবনে আলাদা কিছু মিরাকেল ঘটবে সেটা জানতে হলে এই গল্পটি পুরো পড়তে হবে।
গল্পটি পড়তে পড়তে শিউরে উঠেছি অনেকবার। এত নৃশংসতা! জঙ্গলের পশুরাও বুঝি এইসব মানুষদের থেকে অনেক ভালো!
এবার বলি আমার কিন্তু গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু একটাই অভিযোগ, "শেষ হয়েও হল না" এরকম গল্প পড়লে খুব কষ্ট পাই। আরও জানতে ইচ্ছে করে যে এরপর কী হল! যদিও সেটা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে। এখানে লেখিকার কোনো দোষ নেই। মাঝে মাঝে রাজস্থানী ভাষার ব্যবহার বেশ উপভোগ্য। তাই আমি এই গল্পটি পড়ার অনুরোধ জানাই সবাইকে। পড়ে দেখুন ভালো লাগবে। বানান ভুল চোখে পড়েনি।
সমাপ্ত।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
আপনিও লিখতে পারেন রিভিউ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।